সব মানুষের উৎসুক দৃষ্টি এখন ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের দিকে। কখন কী যে হয় কিছুই বলা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে ভারতীয় সৈন্যরা নিয়ন্ত্রণ রেখা পার হয়ে হামলা চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এবং তাতে ২ জন পাকিস্তানি সৈন্যসহ অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন বলে বলা হচ্ছে। একই সাথে ভারতীয় সৈন্যরা ৭টি জঙ্গি ঘাঁটি গুড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানে ঢুকে হামলা চালানোর সময় এক ভারতীয় সেনা পাকিস্তানিদের হাতে আটক হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। একই ঘটনায় ৮ ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে বলে খবর দিয়েছে পাকিস্তানি ডন পত্রিকা।
তবে প্রকৃত ঘটনা আসলে কী ঘটেছে তা হয়তো হলপ করে কেউ বলতে পারবে না। তবে এ ঘটনার পর পর ভারত তার সীমান্ত সংলগ্ন ৪টি রাজ্যে সতর্কতা জারি করেছে। সীমান্ত সংলগ্ন মাইলের পর মাইল এলাকার সকল লোকালয়কে জনমানব শুণ্য করার জরুরি নির্দেশ দিয়েছে। এতেই বোঝা যায় ঘটনা গুরতর।
অতীতের মতো এবারও পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ উত্তেজনা সৃষ্টির মূলে কাজ করেছে কাশ্মীর ইস্যু। গত ৮ জুলাই কাশ্মীরেরস্বাধীনতাকামী তরুণ নেতা বুরহান ওয়ানিকে ভারতের নিরাপত্তা রক্ষীরা পাশবিক কায়দায় হত্যা করার পর কাশ্মীরে শুরু হয়ব্যাপক ভারতবিরোধী বিক্ষোভ। এর ফলে ভারতীয় সেনা ও নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে প্রাণ দিতে হয় শতাধিক কাশ্মীরিকে। যাদেরএকটা উল্লেখযোগ্য অংশ নারী ও শিশু। এখনো ভারতীয় সেনা ও নিরাপত্তা রক্ষীরা কাশ্মীরিদের ওপর গণহত্যা ও দমন–নির্যাতনঅব্যাহত রেখেছে।
সে পটভূমিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভারত দখলিকৃত উরি এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড সদর দপ্তরে কে বা কারাআকস্মিক হামলা চালায়। এই হামলায় ১৮ জন সেনাসদস্য নিহত এবং আরও অনেকেই আহত হয়। পাকিস্তান অস্বীকার করলেও ভারত এ ঘটনার জন্য পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ এনে পাল্টা হামলার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়ার হুঙ্কার ছাড়ে।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে বেজে উঠতে শুরু করে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দামামা। আশঙ্কা তৈরি হয়, ভয়ংকর যুদ্ধের শুরু হয়ে যাওয়ার, কেননা দেশ দুটি পারমাণবিক শক্তির অধিকারী। আর প্রচলিত যুদ্ধে ভারতের সাথে দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো রসদ এই মুহুর্তে পাকিস্তানের নেই। তাই তারা আক্রান্ত হলে হাত বাড়াতে পারে পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের দিকে। সেটা হলে, আর রক্ষা নেই। নিষ্ঠুর ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়ে যাবে। যার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়েই।
তবে গত কয়েদিন কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছিল উভয় দেশ। যার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেরই মনে ধারণা জন্মেছিল যে, ব্যাপক প্রস্তুতি সত্ত্বেও আর যাই হোক শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ হয়তো হবে না। কিন্তু এর মধ্যে পাকিস্তান সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতীয় সৈন্যরা হামলা করে বসায়, উল্টে যাচ্ছে সব হিসাব।আবারো রণডঙ্কা বেজে উঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ অবস্থায় পাকিস্তান পাল্টা কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, আর তার উপর ভিত্তি করে ভারতের পদক্ষেপ কী হবে তাই নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। কেননা, উভয় দেশের লক্ষ লক্ষ সৈন্য বন্দুকের ট্রিগারে হাত দিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণছে, যে কোন সময় সচল হয়ে উঠতে পারে তাদের আঙ্গুলগুলো। শুরু হয়ে যেতে পারে মহা প্রলয়।
‘চূড়ান্ত লড়াইয়ের পদধ্বনি! সীমান্তে গ্রাম খালি করছে ভারত’ শিরোনামে একটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ১৮ সেপ্টেম্বরকাশ্মীরের উরিতে সেনা চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার পরপরই পাকিস্তানকে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদি। এর মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা দিন। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হুমকি ও কথার লড়াই চললেও এই সময়ে অবশ্য সীমান্তেচলেনি কোনো গুলি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিলো, পাকিস্তানকে ‘উচিত’ শিক্ষা দিতে ভারতের হুমকি ফাঁকা আওয়াজই থেকে যাবে।
তবে সমালোচকদের সব মুখ বন্ধ করে দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সত্যিই সত্যিই পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে হামলা চালিয়ে আসেভারতীয় বাহিনী। এ ঘটনায় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস করার পাশাপাশি ৩৮ সন্ত্রাসীকেহত্যার দাবি করে ভারতীয়রা।
তবে এই হামলাই শেষ নয়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও জোরেশোরে নামছে ভারত। ইঙ্গিত মিলেছে তেমনটাই। ভারতীয়কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার সেদেশের মিডিয়া জানিয়েছে, এই ‘সার্জিক্যাল অ্যাটাক’ এর মধ্য দিয়ে ভারতের জবাবদেয়া কেবল শুরু হলো মাত্র। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও বড় ধরনের অভিযান চালানো হতে পারে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জম্মু কাশ্মীর ও পাঞ্জাব সীমান্তবর্তী ভারতীয় গ্রামগুলো থেকে বেসামরিক জনগণকে সরিয়ে নেয়া শুরুকরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ইতোমধ্যেই সেখানে অবস্থান নিতে শুরু করেছে ভারতীয় সেনারা। এছাড়া কাশ্মীরেরনিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন ভারতীয় এলাকার স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার পাঞ্জাবের রাজ্য সরকারকে সীমান্ত থেকে দশ কিলোমিটার সীমার ভেতরে থাকা গ্রামগুলো খালিকরার প্রস্তুতি নিতে বলেছে। এ ব্যাপারে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল বৃহস্পতিবার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। পাশাপাশিগুজরাট থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত পাকিস্তান সীমান্ত বরাবর সর্বোচ্চ অ্যালার্ট জারি করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
সব মিলিয়ে ভারতে এখন যুদ্ধ যুদ্ধ সাজ। পরিস্থিতি এখন আরও বড় ধরনের অভিযানের ইঙ্গিত দিচ্ছে। স্বভাবতই ভারতীয়হামলায় মুখ বুঝে বসে থাকবে না পাকিস্তান। জবাব দিতে শুরু করবে তারাও। ফলে যে কোনো মুহূর্তে দুই দেশের মধ্যে পুরোদস্তুরলড়াই শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment