Enter your keyword

বিশ্বের প্রতি প্রন্তরে বাংলার মুখ

Wednesday, October 19, 2016

ভারত – পরম বন্ধু না শত্রু?

যেকোন সময়ে ভারত প্রসঙ্গে মানুষকে ২ ভাগ হতে দেখা যায়। কেউ পক্ষে বা বিপক্ষে। প্রসংগ যাই হোক না কেন। পাকিস্তানকে এখানে আনছি না কারন আমরা বিশ্বাস করি পাকিস্তান আমাদের পরম শত্রু। আজ কথা গুলো ভারতকে নিয়েই বলি। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত সময়ে অসময়ে অনেক উপকারে এসেছে আমাদের – একথা অস্বীকার করার কিছু নেই। বিশেষ করে একাত্তরে ভারতের ভুমিকা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ন ছিল বৈকি। তবে তারপরে, এই ভারতকে নিয়ে আমাদের সাধারন মানুষের মনে দ্বিধা – দন্ধের শেষ নেই। অনেক কিছুতেই ভারতের নিরপেক্ষতা বার বার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সেই সাথে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে কিছু কিছু ব্যাপারে তাঁদের সার্থপরতা।

ফারাক্কা বাঁধের ব্যাপারটা ছিল সেই সার্থপরতার শুরু। পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালু হবার পর সেই বাঁধের পরীক্ষা আজও শেষ হয়নি। আর এই ফারাক্কা বাঁধের কারনে আমরা শুকনো মৌসুমে পানি পায় না। আর এখন আছে তিস্তার পানি। সেই চুক্তি আজও হলোনা। কেউ না কেউ ঠিকই বাঁধ সাধে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে বলেছিলেন একবার এই প্রসংগে, যখন মমতা ইলিশের কথা বলছিলেন বাংলাদেশ সফরে এসে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন “পানি আসলে ইলিশও যাবে”। সেদিন মমতাকে আপ্যায়ন করার জন্য নাকি সব কিছু ইলিশ মাছের ছিল। যাই হোক, সেই তিস্তা চুক্তি বন্ধুপ্রতিম ভারত এখনও করতে পারল না। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত অনেক নদীর গতিপথ পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে নানা ভাবে বাঁধ দিয়ে – বিষয়গুলো হয়তো একটা সময়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বাংলাদেশে।

এরপর আসি, বর্ডারে। বিএসএফ এর গুলিতে আজ পর্যন্ত ঠিক কতজন বাংলাদেশী মারা গিয়েছেন এর কি কোন হিসেব আছে? মনে আছে ফেলানীর কথা? গুলি ছুড়ে মেরে ফেলা হয়েছিল আর তার লাশ ঝুলেছিল সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ায়? সেই ফেলানী হত্যার বিচারও কিন্তু হয়েছে কিন্তু আদপে তেমন কোন শাস্তি কাউকে প্রদান করা হয়নি। ফেলানীর কথা হয়তো আমরা আজ ভুলে গেছি কিন্তু এরকম আরো বহু ফেলানী প্রতিদিনই সীমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে মরছে। কিন্তু তারা যেহেতু আমাদের ঘরের কেউ না, তাই আমরাও কেয়ার করি না।

ভারতের মিডিয়া, টিভি বা সিনেমাতে অনেক সময় বাংলাদেশকে কিভাবে রিপ্রেজেন্ট করে খেয়াল করেছেন? কতটাই না অপমানজনক ভাবে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করে? এমন না যে ভারত অনেক উন্নত একটা দেশ আর বাংলাদেশ অনেক নীচে। পরিসংখ্যানে দুদেশই সম পর্যায়ে আছে। ঠান্ডা মাথায় ভারতের নানা হিন্দি সিনেমাতে বাংলাদেশকে কম অপমান করা হয় নাই। অনেক সময় তো একাত্তরের ইতিহাস নিয়েও ভারতীয় সিনেমা বাংলাদেশকে বিকৃত করা হয়েছে। বছর খানেক আগে ৭১ বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধকে একটি ভারতীয় সিনেমায় বলা হয়েছে “ভারত-পাকিস্তানের” মধ্যকার যুদ্ধ। ছবিটির নাম ছিল “গুন্ডে”।  সময়ে সময়ে সেসবের প্রতিবাদও হয়েছে। কিন্তু তাঁদের এই অভ্যাসটা কেন, যদি তারা আমাদের এত পরম বন্ধু হয়ে থাকে?

আসেন এবার ক্রিকেটে? ভারতীয়দের বাংলাদেশ বিদ্বেষ কিন্তু ক্রিকেটকেও ছাড়েনি। বিশ্বকাপের কথা তো ২য় বার আর স্মরন করিয়ে দেয়ার দরকার নেই। মনে আছে আমরা কি ফেস করেছিলাম? তাঁদের দর্শকদের রিএকশন কি ছিল? কেন ই বিদ্বেষ? বিভিন্ন সময়ে আমাদের নানা ফোরামে, ইউটিউবে বা ফেসবুক পেজে অনেক ভারতীয়রা আসেন কমেন্ট করতে আর তাঁদের কমেন্টগুলো দেখলে মনে হয় তাঁদের জন্মই হয়েছে বাংলাদেশকে ছোট করার জন্য। কিন্তু এগুলো তো মানসিক বিকৃতির মত। কোন কারন ছাড়া এরকম করা কেমন পরম বন্ধুর পরিচয়?

আজ পর্যন্ত ভারতের সাথে কোন বাণিজ্য চুক্তিতে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার পায়নি তেমন একটা। সেটা যাই হোক না কেন। ভারত বড় দেশ, কিন্তু সব সময় বাংলাদেশকে একটা চাপ দেয়ার প্রবনতা লক্ষ্য করা যায় – এ কেমন বন্ধুত্ব ? এটা কি বন্ধুত্বের প্রয়োগ। অনেক জায়গায় ডিস্ক্রিমিনেশন দেখা যায়। যেমন বাংলাদেশে ভারতের টিভি চ্যানেল সব চলে কিন্তু ভারতে বাংলাদেশের কোন টিভি চ্যানেল চলে না বললেই চলে। একই ব্যাপার আসে সিনেমাতেও। বাংলাদেশে এখন ভারতীয় সিনেমা মুক্তি দেয়া হয় কিন্তু ভারতে কটা বাংলাদেশী সিনেমা মুক্তি দেয়া হচ্ছে?

ভারত কোন বাংলাদেশী গেলে বাংলাদেশী পরিচয় জানানোর পর হোটেল ওয়ালা রুম দিতে চায় না। অপমান করে কোন কারন ছাড়াই। এতটা রেসিজম বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র আর সেই রাষ্ট্রের মানুষের কাছ থেকে কিভাবে আশা করা যায়? এগুলো হয়তো এখন প্রকট হয়ে উঠেনি কিন্তু একজন বাংলাদেশী হিসেবে তো খুব ইগোতে লাগে।

আর সুন্দরবন-রামপাল ইস্যু নিয়ে তো সবই জানেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে সুন্দরবনে কাছে রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ উতপাদনের জন্য চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক খুলনায় মংলা সমুদ্র বন্দরের কাছে ১৮৩৪ হেক্টর জমির  উপর গোড়ে উঠবে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আর BHEL এর ভূমিকা হবে প্রকল্পের ডিজাইন করা, ইঞ্জিনিয়ারিং , ম্যানুফ্যাকচারিং, কনস্ট্রাকশন, টেস্টিং, কমিশনিং, সার্ভিসিং , পাওয়ার, ইন্ডাস্ট্রি,  ট্রান্সমিশন, ট্রান্সপোর্টেশন, নবায়নযোগ্য শক্তি, তেল ও গ্যাস  এবং প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা। চুক্তি অনুসারে যার ৫০ শতাংশ মালিকানা বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (BPDB )এবং ৫০ শতাংশ মালিকানা ইন্ডিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানির ( NTPC ) ।  ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রথম রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথা ভাবে। এরপর ২০১২ সালের ২৯শে জানুয়ারি NTPC ও BPDB এর মধ্যে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র  বা “মৈত্রী প্রজেক্ট” নিয়ে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি মোতাবেক এই রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫০ শতাংশ মালিকানা  বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (BPDB ) ও ৫০ শতাংশ মালিকানা  ইন্ডিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানির ( NTPC ) । আর দুই দেশের হয়ে  এই Power Trading এর কাজটি  করবে Bangladesh-India Friendship Power Company Ltd (BIFPCL) , এই লক্ষ্যেই  এই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয় । সরকারের আরেক পরিবেশ সমীক্ষায় দেখা  যায় যে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে প্রতিদিন ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাই অক্সাইড ও ৮৫ টন  নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড নির্গত  হবে। বছরে ৯ লাখ টন বিষাক্ত ছাই বাতাসে মিশবে। এছাড়া অন্যান্য উপাদান তো রয়েছেই !!! যা ধীরে ধীরে সুন্দর বনকে ধ্বংস করে ফেলার জন্য যথেষ্ঠ। এখন, এটা সহজেই বোধগম্য যে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ আকার ও আয়তনে ব্যয়র হবার করণে এর সম্পদের পরিমাণও হবে অনেক বেশি !!! কিন্তু আমরা কি করছি ?! ধ্বংসের পথে হাঁটছি !!!

আমরা বলছি না ভারত আমাদের পরম শত্রু। অবশ্যই ভারতের অনেক ভাল গুন আছে। আমাদের অনেক উপকারে এসেছে অতীতে। এখনও হয়তো আসছে। কিন্তু বন্ধুত্বের পরিমাপে তা ক যথেষ্ট বাস্তবতার নিরীখে? আরো একটু বন্ধুত্ব দেখালে কি ভাল হয় না যেখানে ভারত আমাদের চারপাশেই আছে? ভিসা ফ্রি এন্ট্রি, বাণিজ্য ঘাটতি, মিডিয়া সম্প্রসারন, নদী বন্টন এসবের ব্যাপারে কি ভারত তার বন্ধ রাষ্ট্রের প্রতি আরেকটু বন্ধু প্রতিম হতে পারে না? বন্ধুত্ব কি শুধু আমরাই পালন করব।

এটা তো দেশের সাধারন মানুষ সিদ্ধান্ত নিবেন ভারত আমাদের কেমন বন্ধু। বন্ধু ঠিকই, অবশ্যই শ্ত্রু না। তবে কেমন বন্ধু?? বন্ধুতের কিন্তু ভাগ থাকে যেমন – বেস্ট ফ্রেন্ড, জাস্ট ফ্রেন্ড, পরিচিত, প্রতিবেশী, ক্লাসমেট, হাউজমেট বা আর কতকি? আপনার কি মনে হয়? কোনটা?

No comments:

Post a Comment