Enter your keyword

বিশ্বের প্রতি প্রন্তরে বাংলার মুখ

Friday, October 28, 2016

রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে টাকা লাগবে না, পরিকল্পনাই যথেষ্ট

রাজধানীর মতিঝিল থেকে মিরপুর দশ নম্বর গোল চক্করের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার।ছুটির দিনে যদি রাস্তা ফাঁকা থাকে তাহলে গণপরিবহনে এ রাস্তাটুকু ৩৫ থেকে ৪০ মিনিটে পাড়ি দেওয়া যায়। কিন্তু এ ৪০ মিনিটের রাস্তাই যদি আপনাকে আড়াই ঘণ্টায় পাড়ি দিতে হয় তাহলে কেমন লাগবে?

মতিঝিল থেকে শাহবাগের দূরত্ব সাড়ে তিন বা চার কিলোমিটার। আর এই রাস্তাটুকু যদি আপনাকে এক ঘণ্টা ২০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টায় পাড়ি দিতে হয় তাহলে আপনার ভাবনাটা কেমন হবে? কিংবা মৎস্যভবন মোড় থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বে থাকা শাহবাগ মোড় পার হতে যদি আপনাকে ট্রাফিকের ১৮টি সিগন্যাল অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে সেই সময় গাড়িতে বসে বসে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্পর্কে আপনার ভাবনাগুলো কেমন হতে পারে? অথচ, প্রায় প্রতিটা দিন মতিঝিল থেকে অফিস ফেরৎ ক্লান্ত-শ্রান্ত হাজার হাজার মানুষকে এই ভয়ানক দুর্ভোগ পোহাতে পোহাতে ঘরে ফিরতে হচ্ছে।

শুধু এই রাস্তার কথাই বলি কেন, শাহবাগ থেকে সাইন্সল্যাব হয়ে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, গাবতলী কিংবা সায়দাবাদ থেকে মালিবাগ হয়ে রামপুরা, বসুন্ধরা, উত্তরা অথবা সদরঘাট থেকে যেকোন দিকের যানবাহনেই আপনি চড়ে বসেন না কেন, একই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে করতেই আপনাকে গন্তব্যে পৌঁছতে হবে। অর্থাৎ দিনের এক তৃতীয়াংশ বা অর্ধেকই আপনাকে রাস্তায় কাটিয়ে দিতে হচ্ছে।

এতে ফল কি দাঁড়াচ্ছে? মানুষের লক্ষ লক্ষ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন অসহনীয় যানজট মোকাবেলা করতে করতে মানুষের জীবনী শক্তি ক্ষয় হচ্ছে, রাস্তার তীব্র শব্দের মধ্যে থাকতে থাকতে শ্রবণশক্তি হারাচ্ছে, গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সর্বোপরি কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে। ফলে দেশের সামগ্রিক উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

নানা সময়ে প্রকাশিত গবেষণা তথ্যমতে, প্রতিদিন প্রায়  দশমিক ১৬ মিলিয়ন কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে শুধু যানজটের কারণে আরএর মধ্যে  দশমিক ২০ মিলিয়ন ঘণ্টা অর্থাৎ ৪০ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে ব্যবসায়িক কর্মঘণ্টা ফলে যানজটের কারণে প্রতি বছরদেশের ২০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু কর্মঘণ্টা নষ্টের জন্য বছরে ক্ষতি হচ্ছে ১২ হাজার কোটিটাকাপরিবহন ব্যবসায় ক্ষতি  হাজার কোটি টাকাজ্বালানি অপচয় ৫৭৫ কোটি টাকাদুর্ঘটনাজনিত খরচ ৫০ কোটি টাকাএবং পরিবেশের ক্ষতি দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গোটা দেশের অগ্রগতিকেই খামচি দিয়ে আটকে রেখেছে এ যানজট।

সরকার হয়তো বলবে, যানজট নিরসনের জন্যই তো বিভিন্ন স্থানে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, রাস্তা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, এসব বাস্তবায়ন হলেই যানজট কমে যাবে। হ্যাঁ, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে যানজট কমবে এটা আমরাও মানছি। কিন্তু এটাও সত্য যে, সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে যত বড় বড় প্রকল্পই বাস্তবায়ন হোক না কেন তাতে যানজট মুক্ত হবে না রাজধানী শহর।

অথচ, এমন একটি উপায় আছে যার মাধ্যমে কোনো টাকা-পয়সা খরচ করা ছাড়াই রাজধানীকে পুরোপুরি না হলেও প্রায় যানজট মুক্ত করে ফেলা সম্ভব। উপায়টি হচ্ছে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ। আপনি যদি ব্যস্ত সময়গুলোতে লক্ষ করেন, তাহলে দেখবেন রাস্তায় ১০টি গণপরিবহন থাকলে ১০০টি থাকে প্রাইভেট কার। আর এগুলোর প্রায় সবকটির ভেতর যাত্রী হিসেবে দেখবেন বড়জোর একজন বসে আছেন! কোনো কোনো গাড়িতে হয়তো চালকই আছেন, আর কেউ নেই। ২টা প্রাইভেট কার একটি বাসের জায়গা দখল করে আছে, অথচ ৩০টা প্রাইভেট কার মিলেও একটা বাসের সমান যাত্রী বহন করতে পারবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের সীমিত রাস্তাকে কেন এ বিলাসী বাহন দিয়ে আটকে রাখছি? অতএব, রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে হলে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।

বিআরটিএ ২০১৫ সালের জুন মাসের হিসাব অনুযায়ীরাজধানীতে মোট নিবন্ধিত বাস রয়েছে ২২ হাজার ৮১৪টি। অন্যদিকেপ্রাইভেটকারের সংখ্যা  লাখ ১৩ হাজার ৪৮৯টি।

কিন্তু চাইলেই তো আর রাস্তা থেকে প্রাইভেট কার তুলে দেওয়া যাবে না। তাই সিঙ্গাপুরের মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। ছুটির দিনে যেকোন রাস্তায় প্রাইভেট কারগুলোর চলাচল উন্মুক্ত থাকলেও অফিস-ডেগুলোতে সকল রাস্তায় অবাদে প্রাইভেট কার চলাচল করতে দেওয়া যাবে না।তবে হ্যাঁ, কারো যদি যেতেই হয় তাহলে তাকে উচ্চ হারে ফি দিয়ে অফিস-ডেতে চলাচলের জন্য আলাদা লাইসেন্স নেওয়ার বিধান করতে হবে।তাহলে দেখা যাবে অতিরিক্ত লাইসেন্স ফি’র ভয়ে অনেকেই অফিস-ডেতে গাড়ি বের করবেন না। আর করলেও সরকারের কোষাগারে জমা পড়বে অতিরিক্ত অর্থ, যা দিয়ে গণপরিবহনকে উন্নত করলেই অভিজাতরাও তাতে চলাচল করতে স্বাচ্ছন্দ অনুভব করবেন।ফলে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে তাকিয়ে না থেকে আমাদের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী একটু এ বিষয়টার দিকে একটু নজর দিবেন কি? 

No comments:

Post a Comment