Enter your keyword

বিশ্বের প্রতি প্রন্তরে বাংলার মুখ

Wednesday, March 1, 2017

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি কিছু চিএ

যুগের অত্যাধুনিকতার সাথে সাথে অনেক কিছুই ইতিহাস হয়ে যায়। কৃষক আঁউস এবং আমন ধান কেটে এনে বাড়ী উঠানে (আংগিনায়) এভাবে গরু দিয়ে মাড়াই করে ধানগাছ থেকে ধান ছাটাই করতো, আর এইকাজে সহযোগিতা করতো কৃষাণীরা ও পরিবারের ছোট বড় সবাই, সবার মাঝে ছিলো আনন্দ আর উদ্দিপনা । যা আজ অতীত হয়ে গেছে ।

উপজাতি (আদিবাসী) মেয়েরা সাধারণত উপজাতি ছেলেদের তুলনায় কঠোর পরিশ্রমী, এটাই তার একটা নমুনা ।

গ্রামের গৃহিনীরা ঢেঁকি দিয়ে আতপ চাউলের গুড়া তৈরী করছেন শীতের পিঠা বানানোর জন্য।

একসময় মাটিতে এভাবে কিছু বিছনাপাটি বিছিয়ে কলাপাতায় করে খাওয়া হতো বিভিন্ন দাওয়াতে । বর্তমান যুগে যা একেবারে বিলুপ্ত।

মহান আল্লাহ্-র অশেষ নেয়ামত, শীতকালে খেজুর গাছের সুস্বাদু এবং সুমিষ্ট রস কার না ভালো লাগে।

একসময়ে এইদেশের জনগনের একমাত্র যান্ত্রিক বাহন ছিল এই বাস।। ইংল্যান্ডের বেডফোর্ড কোম্পানীর তৈরী এইবাস চালু করতে লাগতো একধরনের 'হ্যান্ডেল'। বাসের হেলপার হ্যান্ডেল দিয়ে ইঞ্জিনের সামনে বিশেষস্থানে লাগিয়ে প্রথমে আস্তে আস্তে করে ঘুরিয়ে পরে ঘুরানোর গতি বাড়িয়ে একসময় খুব জোরে ঘুরিয়ে এই বাসের ইঞ্জিন চালু করতো, যা এখন পুরাই ইতিহাস।


আগের যুগের খড়ম আপনাদের কি মনে পড়ে ঘরে নিজেরা পাদুকা হিসাব ব্যবহার করতো এবং মেহমান আসলে পা ধোয়ার জন্য দিত। এখন সোনারগাঁ এর যাদুঘরে আাছে।

" ঘানি " মানে কষ্ট। দীর্ঘকাল বা দীর্ঘ সময় ধরে কষ্টকে বহন করে চলাকে ঘানি বলে। ছোট বেলায় বাবার মুখে শুনেছি সংসারের ঘানি টানতে টানতে বাবার অতিষ্ট হবার কথা। মায়ের মুখে শুনেছি রান্না ঘরের হাড়ি সামলানো ঘানির কথা। মোট কথা ছোটকাল থেকে এই ঘানির সাথে আমরা এমন ভাবে পরিচিত যে, বড় হয়ে আজ এই ঘানি নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে, হাজার চেষ্টাতে ও মুক্ত হতে পারছি না। সরষে দানা থেকে খাঁটি সরিষার তেল সংগ্রহের সময়তো এখনই। এই ভাবে চরকির মধ্যে সরিষা দেওয়ার পর দীর্ঘ সময় ধরে কলুর বলদ এই ঘানি টেনে নিয়ে বেড়ায়। বারং বার সরিষা পিষে ফোঁটা ফোঁটা খাটি সরিষার তেল সংগ্রহ করা হয়। যা ১০০% খাঁটি ঘানির তেল। বড়ই ফলদায়ক। ভেজাল তেলের বাজারে খাঁটি ঘানির তেল পাওয়া অতিভ কষ্টকর। কলুর বলদের কষ্টের ফসল ফোঁটা ফোঁটা ঘানির তেল বহু রোগের ঔষধ, অল্পতেই অনেক কার্যকরী। এটা আমাদেরকে এই শিক্খা দেয় যে কষ্টের ফসল সামান্যতেই অনেক যা ভেজালে পাওয়া প্রায় অসন্ভব।


একসময়ে গ্রামেবাড়ীতে বিয়ের অনুষ্ঠানে আতপ চাউলের গুড়া দিয়ে হাতে তৈরী পিঠা পরিবেশন করা হতো । বিয়ের পিঠা বানানোর জন্য গ্রামের তরুণীরা দলবদ্ধ হয়ে ঢেঁকি দিয়ে আতপ চাউল গুড়া করতো এবং বিয়ের গান গেয়ে গেয়ে আনন্দ উৎসব করতো । এটা সেই চিত্র, যা নতুন প্রজন্মের নিকট শুধু ইতিহাস।


গরু, নাংগল ও মই আগেকার দিনে কৃষকদের জমি চাষের জন্য ছিল প্রধান ও একমাত্র উপকরণ। অথচ বর্তমান যুগে অাধুনিকতার তালে তালে চাষের এই সব উপকরণ হারিয়ে যাচ্ছে । বর্তমান যুগে জমি চাষ করা হয় ট্রাক্টর দিয়ে । কাঠের তৈরী নাংগল ও বাঁশের তৈরী মই জমি চাষের এই উপকরণগুলো দেখতে হলে একসময় যাদুঘরে যেতে হবে ।



একসময়ে দেশের মানুষের বাহনগুলির মাঝে গরুর গাড়ীও বাহন হিসাবে ছিলো অন্যতম , যা এখন যুগের তালে তালে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে ।


" লালচে মুড়ি " দেখতে কদাকার হলেও ১০০% ভেজাল মুক্ত খাঁটি মোখরোচক খাবার। বাজারের ধবধবে সাদা ভেজালযুক্ত মুড়ির চেয়ে স্বাদেও অতুলনীয়। এই শীতে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে ধুম পড়ে মুড়ি ভাজার। মা বোনেরা হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও এই মুড়ি ভাজার পর্ব ঠিক সামলিয়ে নেয়। সঠিক উপকরন মিশ্রিত করার ফলেই তো চাউল ঠিক ভাবে ফুটে খাঁটি মুড়ি বেরিয়ে আসে। আর এই মুড়ি দিয়ে চলে শীতের মুখরোচক নানা রকমের খাবার। গুড় মুড়ি, মুড়ির মোয়া এরকম বহু রকম মুড়ির খাবার দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা কিংবা সকাল বিকেলের নাস্তা পর্ব সন্পূর্ন হয়। শীত এবং মচমচে মুড়ি এ দু'টোতে বাংলা মুখরিত, পিঠা পাবন কিংবা অতিথি আপ্যায়ন এ সময়ের বাংলার ব্যস্ত রূপ, অপরূপ।


" চড়াই ভাতি " উপচে পড়া আনন্দের এক মহা আয়োজন। পরিবারের বড়রা যেখানে শীতের পিঠা পাবণ এবং সদুর( মেহমান) নিয়ে ব্যস্ত, এই সুযোগে ছোটরা কম যায় কিসে! শুরু হয়ে যায় বড়দের চোখ ফাঁকি দিয়ে চড়াই ভাতির আয়োজন। এ ঘর ও ঘর থেকে চাউলসহ রান্নার সামগ্রী বড়দের নজর এড়িয়ে সংগ্রহ করা হয়। কিছু সংখ্যক উদার মনের মায়েরা এ আয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়ায়। নয়ত বেশীর ভাগই ধমক কিংবা বাঁকা চোখে শাসিত করে, ঘরে খাওয়া বন্ধ হবে বলে জানিয়ে দেয়। মায়েদের শাসন কিংবা ধমক কোনটাই এই মহা আয়োজনকে থামিয়ে দিতে পারে না বরং তা আরও বহু গুণ বেড়ে যায়। কুড়ানো খড়ির ধোঁয়ায় চোখের পানিতে ভেসে রাধুনীর সেই কি অবস্হা! অবশেষে আনাড়ি হাতের সেই আধা সিদ্ধ রান্না পরিবেশন করা হয়। বড় হয়ে বহু নামীদামী খাবার হয়ত খাই কিন্তু চড়াই ভাতির সেই আধা সিদ্ধ খাবারের মজা কোথাও খুঁজে পাই না। বড় হয়ে আজ চড়াই ভাতিকে পাই বন ভোজন রূপে। বন ভোজনে হয়ত নতুন নতুন জায়গা দেখা হয় কিন্তু চড়াই ভাতির সেই লুকোচুরী খেলার আনন্দ কি তাতে খুঁজে পাওয়া যায়!! এই শীতে মন চলে যায় গাঁয়ে চড়াই ভাতির টানে।



এই রকম গাছ পাকা কলা ডিজিটাল যুগের প্রজন্মের নিকট রুপ কথা বলেই মনে হবে, হয়তো কেউ প্রশ্ন করে বলবে কলা আবার গাছে পাকে নাকি ?


এই রকম গাছ পাকা কলা ডিজিটাল যুগের প্রজন্মের নিকট রুপ কথা বলেই মনে হবে, হয়তো কেউ প্রশ্ন করে বলবে কলা আবার গাছে পাকে নাকি ?

" পালকি " গ্রাম বাংলার আভিজাত্যের প্রতীক। আজ হারিয়ে গেছে কালের গহ্বরে। ৭০ এর দশকের প্রথম দিকে কিছু পালকি ছিল যা আমরা ছোট বেলায় দেখেছি, তবে এতে উঠার সুযোগ হয়নি, এমনিতে খেলার ছলে উঠে বসে আবার নেমেছি, বেহারা কাঁধে নিয়ে বেড়ায়নি। কারন ঐ বয়স পালকিতে উঠার বয়স ছিল না, পালকিতে উঠতো বয়স্ক লোক, মহিলা এবং বর কনে। এর কোনটাই ছিলাম না, তবে পালকির পিছে পিছে বহু দৌড়েছি, বেহারা পালকিতে কনে নিয়ে বরের বাড়ীর এ ঘর ও ঘরের দরজায় দাড়িঁয়ে গান গাইতো বকশিসের জন্য, আর সবাই মিলে পালকির ভিতর নতূন বৌ দেখার অপেক্খা, সে এক বিচিত্র আনন্দ, পূলকিত অনুভূতি, আজ আর কোন কিছুতেই তা খুজে পাই না। আজ পার্লারে গিয়ে, মেকাপে সেজে, নকল চেহারা নিয়ে দামী গাড়ীতে করে নতুন বৌ আসে ঠিকেই কিন্তু পালকির সেই সরলা সহজ নব বধুর খাটি সৌন্দর্য্য কিংবা আমাদের সেই বধু দেখার আনন্দ কোনটাই আজ আর নেই। আভিজাত্যের প্রতীক পালকির সাথে এ সব হারিয়ে গেছে। পালকি এখন শুধুই স্মৃতি।



" বীচন তোলা।" ছেলে বেলার উপার্জনের এক মাত্র বৈধ প্রন্থা। এই কাজটিতে পরিবারের বড়রা ( পূরুষেরা) একে বারেই আনাড়ি, মহিলাদের সময় কোথায়! তাই এই কাজটি করার ভার এসে পড়ে ছোটদের হাতে। উপার্জনের এই সুযোগ ছাড়ে কে!! তাই সুবিধা মত দাম হাকানো হয়, প্রতি আঁটি ০.২৫ পয়সা চার আঁটি ১.০০ টাকা। বড়রা দিতে বাধ্য, নয়ত রোপার জমিন শুকিয়ে যাবে। খেলার মাঝ থেকে সময় বের করে শুরু হয় উপার্জন। কে কত আঁটি তুললো তার প্রতিযোগীতা। সারা বিকেল বীচন তুলে সন্ধ্যায় বড়দের কাছ থেকে ২/৩ টাকা পেয়ে যে আনন্দ পেয়েছি, আজ বড় হয়ে মোটা টাকা হাতে পেয়েও খুঁজে পাই না সেই ২/৩ টাকার চরম আনন্দ পরম তৃপ্তি!! আজ স্মৃতি শুধু টেনে নিয়ে যায় অতীতে, উপার্জনস্হল বীচন তলাতে।


ইরি মৌসুম! ব্যস্ত কৃষক জমি তৈরীতে। আগাছা মুক্ত করে জমি সমান করা, যেন সেচের পানি সমান ভাবে সব জায়গায় পৌছায়। তাদের এই কষ্টের, অক্লান্ত শ্রমের ফসল আসবে, সবুজে সোনালীতে চোখ জুড়াবে। বাংলা সাজবে নব সাজে!! ফুটবে হাসি কৃষান কূলে!


গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গরুর গাড়ী ! আজকাল বিলুপ্তপ্রায় - খুব কমই চোখে পড়ে !


" ইরি মৌসুম " সারা বাংলায় চলছে পূরোদমে রোপা গাঁড়া। ব্যস্ত কৃষক ব্যস্ত বাংলা। ইরি অনেক পরিশ্রমী ফসল। বীচন থেকে শুরু করে ধান ঘরে তোলা অবদি বহু ঘাম ঝরাতে হয়। প্রতিটি ঘামের ফোঁটা, তাদের শ্রম এই ইরি ফসল সারা বছর আমাদের পেট ভরায়। আমরা কিছু টাকার বিনিময় অতি সহজে তা পেয়ে যাই ঠিকেই কিন্তু একবার ও ভাবিনা এর পিছনে কৃষান কূলের ঘাম ঝরানো শ্রমের কথা। আমরা তাদের কষ্টের কথা মনে রেখে শ্রদ্ধা ভরে তাদেরকে মূল্যায়ন করি, তাদের শ্রমের মূল্য দিই। যেন সোনালী ধানের সাথে তাদের মুখের মধুর হাসি বিলীন না হয়। তারা আগ্রহী হয়ে উঠে বারং বার সোনা ফলাতে। ওরা কারিগর, মাটি থেকে সোনা বের করার মহা কারিগর!!


" জাঁতা " কষ্টের আরেক নাম। ডাল ভাংগার প্রাচীনতম পদ্ধতি। পাথরের দু'পাটার মাঝে ডাল দিয়ে প্রচন্ড শক্তির সাথে উপরের অংশটি ঘুরাতে হয়। যুগ যুগ ধরে সংসারের অন্যান্য পরিশ্রমী কাজ গুলোর পাশাপাশি এই অমানুবিক জাঁতা ঘুরানোর কাজটি করে আসছিল বাংলার মা দাদীরা। একটু ভাবলে সত্যেই অবাক হতে হয়, ধান ঢেঁকি রান্না বাচ্চা সামলিয়ে কর্তাকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি জাঁতা ঘুরানোর মত শক্তি তাঁরা পেতো কোথায়!! এত কিছুর পরও ছিল না কোন অভিযোগ, ঝগড়া, কাজের ভয়ে বাপের বাড়ী পালিয়ে যাওয়া কিংবা তালাকের মত আত্নঘাতী কোন সিদ্ধান্ত। আধুনিক মা বোনদের কাছ থেকে হয়ত আমরা তা পাই না, আশাও করি না। শুধু এই টুকু চাই এই পরিশ্রমী মা দাদীদেরকে শ্রদ্ধা জানায়ে, তাদের মাঝে আজও যারা বেচে আছে, তাদেরকে অবহেলা না করে একটু যত্ন নিই। তাদেরকে বৃদ্ধা আশ্রমে না পাঠিয়ে নিজের কাছে রেখে সেবা যত্ন করি। তবেই যদি কিছুটা সাপমোচন হয়।


" সাকোঁ " বাংলার এক হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি। আমাদের ছোট বেলায় অর্থাৎ ৭০ এর দশকে এমন কোন গ্রাম ছিল না সাকোঁ ছাড়া, প্রতিটি গ্রামে ৮/১০ টি সাকোঁ থাকতোই ভরা বর্ষায়। বর্ষায় পানি বেড়ে গেলে গ্রামের বড়রা সম্মিলিত ভাবে বাড়ী বাড়ী গিয়ে বাঁশ সংগ্রহ করে সবাই মিলে এই সাঁকো তৈরী করতো। আমরা ছোটরা দা দড়ি এগিয়ে দিয়ে সহযোগীতা করতাম, প্রতিনিয়ত সেই সাঁকো পার হওয়া ছিল আমাদের ছোটদের জন্য এক ভয়ানক অভিগ্ঘতা, এমন কোন বনধু বান্ধব ছিল না যারা মাসে অন্তত ২/১ বার স্কুল যাওয়া আসার পথে পা পিছলে হউক কিংবা বন্ধুদের দুষ্টমির কারনেই হউক সাঁকো পার হতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায়নি। আর প্রতিনিয়ত বন্ধুরা মিলে সাঁকোর উপর থেকে পানিতে লাফালাফির খেলা, সে তো চলতেই থাকতো বড়দের ধমক কিংবা শাসন না খাওয়া পর্যন্ত! সাঁকো পার হতে গিয়ে বন্ধুদের সাহস যোগাতাম এ বলে যে, দেখ এটা তো বাঁশের সাঁকো পোলসেরাতে চুলের সাঁকো পার হতে হবে, যা আরও কঠিন। তারপর ও সাঁকো ভয় হয়েই ছিল সব সময়। আজ আর সাঁকো নেই, কালের চাহিদা মত তা পাকা রাস্তা এবং ব্রীজে পরিনত হয়েছে, কিন্তু সাঁকোর সেই মধু মাখা ভয় তাড়িয়ে বেড়ায় স্মৃতি হয়ে, ডেকে নিতে চায় হারিয়ে যাওয়া সেই কৈশোরে!!



এটাও একধরনের গাড়ী এবং এই গাড়ী নাম হলো ঠেলা গাড়ী, এই গাড়ী কোন ইঞ্জিন চালিত গাড়ী নয়, এই গাড়ী মূলত কম দূরত্বে মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার হয়। কালের আর্বতনে এই গাড়ীও আমরা হারাতে বসেছি ।




















No comments:

Post a Comment