Enter your keyword

বিশ্বের প্রতি প্রন্তরে বাংলার মুখ

Friday, October 21, 2016

বাঙালি জাতির আদি পুরুষের সন্ধান!!!!!

বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস এবং আদিম জনগোষ্ঠীর ধারণা ধূম্রজালে আচ্ছন্ন রয়েছে নানাবিধ মত অভিমত পক্ষ বিপক্ষেরউল্টাপাল্টা বয়ানে পাঠকরা বিভ্রান্ত নানা মুনির নানা মত ইতিহাসবেত্তা  গবেষকদের সত্যঅসত্যের বর্ণনায় সাধারণশিক্ষিতরা তথ্যবিভ্রাটের শিকার অধিকাংশের বর্ণনাই উদ্ভটমিথ্যাকল্পনার রঙে রঙিন বিভিন্ন ধরনের মিথও যুক্ত এর সাথেকেউ বা আবার সত্যের সন্ধান পেয়েও আদর্শিক কারণে ইহা গোপন করেছেন বা অস্বীকার করেছেন আবার কেউ সত্যেরকাছাকাছি পৌঁছেও সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে সেখান থেকে ছিটকে পড়েছেন  জন্যই বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস স্কুলকলেজ,ইউনিভার্সিটির পাঠ্যভুক্ত হতে পারেনি তাই প্রাগৈতিহাসিককালের সঠিক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত এদেশের শিক্ষার্থী  শিক্ষকরা;সামগ্রিকভাবে সকল জনগোষ্ঠী আলোচ্য নিবন্ধে আমরা  ভূখন্ডের প্রাচীন মানবগোষ্ঠীর আবির্ভাব নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনাকরব আমরা মনে করি বাংলার প্রাচীন অধিবাসী সম্পর্কে পরিবেশিত এসব তথ্য শতভাগ সত্যিসঠিক এবং বস্তুনিষ্ঠ কারণ পৃথিবীতে সবচেয়ে নির্ভুল জ্ঞান হলো অহি মহাজ্ঞানী হতে হলে তাকে অবশ্যই অহির শরণাপন্ন হতে হবে অহির ভিত্তিই নিবন্ধের উৎস

বাংলাদেশের ইতিহাস রচনার পথিকৃৎ গোলাম হোসায়ন জইদপুরি তিনি বাংলার ইতিহাস নিয়ে ১৭৬৬১৭৮৮ সালে রচনাকরেন ফারসি গ্রন্থ রিয়াজ উস সালাতিন  পুস্তকে তিনি হযরত নুহ এর সাথে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটা সম্পর্কেরবিষয় উত্থাপন করেছেন (সূত্র : মোহাম্মদ হাননান : বাঙালির ইতিহাস (প্রাচীন যুগ থেকে ১৯৭৪), আগামী প্রকাশনী৩৬,বাংলাবাজার ঢাকা১১০০প্রথম বর্ধিত সংস্করণ ফেব্রুয়ারি ২০১৪পৃ ২৮) তিনি লিখেছেনহযরত নুহ এর পুত্র হামেরজ্যেষ্ঠ সন্তান হিন্দ হিন্দুস্তানে আসার দরুণ এই অঞ্চলের নাম তাঁর নামানুসারে রাখা হয় সিন্ধু জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার সাথে এসে সিন্ধ দেশেবসতি স্থাপন করায় এই অঞ্চলের নাম তাঁরই নামানুসারে সিন্ধু রাখা হয় হিন্দের দ্বিতীয় পুত্র বং (বঙ্গ)-এর সন্তানেরা বাংলায়উপনিবেশ স্থাপন করেন আদিতে বাংলার নাম ছিল বঙ (সূত্র : গোলাম হোসায়ন সলীম  বাংলার ইতিহাস (রিয়াজউসসালাতীনের বঙ্গানুবাদ), আকবরউদ্দীন অনূদিতঅবসর প্রকাশনফেব্রুয়ারি ২০০৮পৃষ্ঠা ২৪)

বিস্ময়কর এবং রহস্যজনক হলেও তথ্যটি বাস্তব এবং সত্য কারণ নবি রসুলদের বংশধররাই দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে বসতি স্থাপনকরেন প্রাগৈতিকহাসিককাল বা প্রাচীনকাল উভয় সময়কালেই এর সত্যতা বহন করে অহির ধারকবাহকরাই পৃথিবীর বিভিন্নএলাকার আদিবাসী বর্তমান পৃথিবীতে যত মানুষ আছে সবারই পূর্বসূরী নবীরসুলবৃন্দ সে হিসেবে নুহ নবী  তাঁর বংশধরদেরসাথে বাংলাদেশের আদি ইতিহাস সংশ্লিষ্ট  বিষয়ে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ মোহাম্মদ হাননান এর বয়ান প্রাণিধানযোগ্য তাঁরমতেবাঙালির ইতিহাস অতি প্রাচীন আনুমানিক ১০ হাজার বছর পূর্ব থেকে বাঙালির যাত্রা শুরু হয়েছিল আরেকটি সূত্র মতেবাঙালি জাতি এসেছে নুহ এর বংশ থেকেই (সূত্র : মোহাম্মদ হাননান : বাঙালির ইতিহাস (প্রাচীন যুগ থেকে ১৯৭৪),আগামী প্রকাশনী৩৬বাংলাবাজার ঢাকা১১০০প্রথম বর্ধিত সংস্করণ ফেব্রুয়ারি ২০১৪পৃ ৬৪৪৩১) অন্যত্র তিনিবলেছেনবাংলাদেশের ইতিহাস নুহ এর সময় থেকেই শুরু এবং  থেকেই অনুমান করা যায় এর ইতিহাসের প্রাচীনতারবিষয়টি (সূত্র : মোহাম্মদ হাননান : বাঙালির ইতিহাস (প্রাচীন যুগ থেকে ১৯৭৪), আগামী প্রকাশনী৩৬বাংলাবাজারঢাকা১১০০প্রথম বর্ধিত সংস্করণ ফেব্রুয়ারি ২০১৪পৃ ৬৪৪৩০) খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে  সম্পর্কে বলা হয়েছেআপনআপন বংশ  জাতি অনুসারে ইহার নুহের সন্তানদের গোষ্ঠীএবং জলপ্লাবনের পরে ইহাদের হইতে উৎপন্ন নানা জাতি পৃথিবীতেবিভক্ত হইল (পবিত্র বাইবেলপুরাতন  নতুন নিয়মবাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটিঢাকা ১৯৮১পৃ ১২১৩)

আদম .-এর মাধ্যমে জগতে মানব বসতি শুরু তিনিই মানবজাতির জনক তাঁর হাতেই সভ্যতার অভিযাত্রা তাঁর আগমনে পৃথিবী ধন্য বর্তমান দুনিয়ার সব মানুষই তাঁর বংশধর  সন্তানসন্তুতি তিনি শুধু সাধারণ কোনো ব্যক্তি ছিলেন না তিনিছিলেন আল্লাহ প্রেরিত অহির নিশানবাহী পুরুষ নবীদের পরম্পরায় আদম যদিও সর্বপ্রথম নবিকিন্তু তাঁর আমলে ইমানেরসাথে কুফর  গোমরাহির মোকাবেলা ছিলো না তাঁর শরিয়াতের অধিকাংশ বিধানই পৃথিবী আবাদকরণ  মানবীয়প্রয়োজনাদির সাথে সম্পৃক্ত কুফর  কাফিরদের কোথাও অস্তিত্ব ছিল না কুফর  শিরকের সাথে ইমানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নুহেরআমল থেকেই শুরু হয় রিসালাত  শরিয়াতের দিক দিয়ে তিনিই জগতের প্রথম রসুল এছাড়া তুফানে সমগ্র পৃথিবী নিমজ্জিতহওয়ার পর যারা প্রাণে বেঁচে ছিলেনতারা ছিলো হযরত নুহ  তাঁর নৌকাস্থিত সঙ্গিসাথী তাদের দ্বারাই পৃথিবী নতুনভাবেআবাদ হয়  কারণেই তাঁকে, ‘ছোটো আদম’ বলা হয় (সূত্র : মুফতি মুহাম্মাদ শফিতাফসিরে মারেফুল কুরআন (মাওলানামুহিউদ্দিন খান কর্তৃক তরযমাকৃত), খাদেমুল হারামাইন বাদশাহ ফাহাদ কুরআন মুদ্রণ প্রকল্পসৌদি আরবপৃ ৪৫২)

 প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক  গবেষক মোহাম্মদ হাননান আরও লিখেছেনহযরত আদম থেকে আমাদের এই মানব জাতির শুরুকিন্তু নুহের সময়ে সমগ্র পৃথিবীতে এক মহাপ্লাবন ঘটে এই মহাপ্লাবনে দুনিয়ার সকল কিছু ধ্বংস হয়ে যায় কেউ জীবিত ছিলনা শুধু নুহের নৌকায় আরোহণ করেছিলেন ৮০ জন নুহের ভক্তএই ৮০ জন থেকেই মানব জাতির আবার নতুন যাত্রা

এই নতুন যাত্রায় জাতিরও সম্পর্ক ছিল বেঁচে যাওয়া ৮০ জনের মধ্যে ছিলেন নূহের এক পুত্রনাম তাঁর ‘হাম নুহ তাঁর পুত্রহামকে বললেন, ‘তুমি মানব বসতি স্থাপনের জন্যে চলে যাও পৃথিবীর দক্ষিণ দিকে পিতার নির্দেশ পেয়ে হাম চলে এলেন আমাদেরএশিয়া মহাদেশের কাছাকাছি সেখানে এসে তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র হিন্দকে পাঠালেন ভারতের দিকে অনেকে মনে করেনহামেরপুত্র হিন্দের নাম অনুসারেই ভারতের নাম হয়েছে হিন্দুস্তান

হিন্দের দ্বিতীয় পুত্রের নাম ছিল ‘বঙ্গ এই  বঙ্গ’- এর সন্তানরাই বাঙালি বলে পরিচিতি লাভ করে এই গল্প সত্যি হলে বলতে হবেবাঙালির আদি পুরুষ হচ্ছেন ‘বঙ্গ (সূত্র : মোহাম্মদ হান্নান : দেশের নামটি বাংলাদেশ কে রেখেছে এই নামঅনুপম প্রকাশনী,ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯পৃষ্ঠা ১৫১৬)

অতীতকাল থেকেই দেখা যায়মুসলিমরা নামের সাথে বাঙাল বা বাঙালি শব্দ ব্যবহার করছে উদাহরণস্বরূপলালবাগ কেল্লারপরিবিবির কবরের দক্ষিণ পাশে ফাঁকা জায়গায় একটি কবর আছে নামফলকে লেখা মির্জা বাঙালির সমাধি (সূত্র : মাসিকইতিহাস আন্বেষা১৩বর্ষএপ্রিল ২০১৬ফকিরাপুল ঢাকাপৃ ২৬) বর্তমানেও দেখা যাবে অনেক মুসলিমই নামের আগে বা পরেবাঙাল বা বাঙালি শব্দ ব্যবহার করে কিন্তু কোনো হিন্দু বা অমুসলিমকে এসব পরিভাষা ব্যবহার করতে দেখা যায় না এরকারণ নুহের প্রপৌত্র বঙ ছিল মুসলিম এবং আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী তার স্মৃতির জন্য হোক বা দেশজাতি প্রেম হোকমুসলিমরা নামের সাথে শব্দগুলো ব্যবহার করছে অন্যদিকে অমুসলিমরা সচেতনভাবেই এসব শব্দ এড়িয়ে চলছে তাছাড়া আর্যহিন্দুদের আগমনের পূর্বে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানকাল  বস্তুর সুন্দর নাম ছিলো কিন্তু আর্য হিন্দুরা এদেশ জয় করে তারা নামবদলিয়ে দেয় ইতিহাসবিদ মোহাম্মাদ আবদুল জব্বারের ভাষায়আর্যগণ সকল ক্রিয়াকর্ম  ব্যবহারিক জীবনে তাদের আধিপত্যবিস্তার করতে লাগল তারা গ্রামনদীবৃক্ষলতা  কুলের পূর্বতন নাম পরিবর্তন করে তাদের ভাষায় নতুন নামকরণ করতেআরম্ভ করল (সূত্র : মোঃ আবদুল জব্বারবাংলাদেশের ইতিহাস (প্রাচীন যুগ), ঢাকা ১৯৭৭পৃ ৩০উদ্বৃতিঅধ্যাপক সৈয়দমাহমুদুল হাসানবাংলার ইতিহাস (প্রাচীনকাল থেকে ১৭৬৫ সাল পর্যন্ত), অধুনা প্রকাশন৩২/বাংলাবাজার ঢাকা১১০০,২য় সংস্করণজানুয়ারি ২০০৬,  পৃ ৩৩)

বঙ ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলের যে স্থান এসে বসতি স্থাপন করে সেই স্থানের নাম তাঁরই নামানুসারে হয় বঙ্গদেশ অথবা বঙেরসন্তানরাই বঙ্গাল বা বাঙ্গাল অথবা পরবর্তীকালে বাঙ্গালীআরও পরে বাঙালি বলে খ্যাতি লাভ করে (সূত্র : মোহাম্মদ হাননানবাঙালির ইতিহাস (প্রাচীন যুগ থেকে ১৯৭৪), আগামী প্রকাশনী৩৬বাংলাবাজার ঢাকা১১০০প্রথম বর্ধিত সংস্করণফেব্রুয়ারি ২০১৪পৃ ২৯অতএব সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় বঙই হলেন বাঙালি জাতির আদিম পুরুষআদি গুরু  আদি জনকবঙ থেকেই বাঙালি জাতির পয়দা বা উৎপত্তি

বঙ্গোপসাগরের নামকরণও এই বঙ থেকে বঙই বাংলা  বাংলাদেশের গোড়াপত্তন ঘটান তাই বঙই বাঙালি জাতির স্থপতি,প্রতিষ্ঠাতা  প্রাণপুরুষ বর্তমান বাঙালি  বাংলাদেশিরা তাঁরই উত্তরসূরী

No comments:

Post a Comment