Enter your keyword

বিশ্বের প্রতি প্রন্তরে বাংলার মুখ

Thursday, October 20, 2016

এশিয়ার ১৬টি দেশের কৃষকদের নেতা দিনাজপুরের মেয়ে সাজেদা

বাংলাদেশের নারীরা এখন আর শুধু দেশে নয়, তারা তাদের যোগ্যতার প্রমাণ রাখছে বিশ্ব পরিমণ্ডলেও। তারই এক জ্বলন্ত উদাহরণ বাংলাদেশের দিনাজপুরের মেয়ে সাজেদা বেগম। ১৬টি দেশের ২০টি সংগঠনের প্রায় এক লাখ কৃষকের নেতৃত্ব দিচ্ছেনবাংলাদেশের কৃষক  কৃষকনেতা সাজেদা বেগম। চলতি বছরের আগস্ট মাসে দিনাজপুরের এই কৃষক এশিয়ান ফার্মার্সঅ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।  পদে দায়িত্ব পালন করবেন দুই বছর। তারপর আবার এইঅ্যাসোসিয়েশনেরই প্রেসিডেন্ট হিসেবে আরও দুই বছর দায়িত্ব পালন করবেন। 

সাজেদা বেগমকে ১৬টি দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার আগে গ্রামইউনিয়নউপজেলা  কেন্দ্রীয় কৃষকসংগঠনে নেতৃত্বে দক্ষতা দেখাতেহয়েছে। সততানিষ্ঠাদায়িত্ববোধ সবকিছু বিবেচনাতেই তিনি এশিয়ার নেতৃত্ব পেয়েছেন। সাজেদা দেশের ২২ হাজার কৃষকপরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রীর প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।  পদের জন্য অন্যকৃষকসংগঠনের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে ভোট পেতে হয়েছে। কেন্দ্রীয়  কৃষকসংগঠনেও সাজেদা বেগমই প্রথম নারীযিনিপ্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন

সাজেদা বেগমের বাবামা  ভাই কৃষিকাজ করেন। বিয়ের আগে থেকেই তিনি নিজেও কৃষির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অষ্টম শ্রেণিতেপড়া অবস্থায় কৃষক মতিয়ার রহমানের সঙ্গে সাজেদার বিয়ে হয়। স্বামী ততটা পড়াশোনা করেননি। তবে স্ত্রীকে সার্বিকভাবেসহায়তা করছেন  বর্তমানে সাজেদা এক ছেলে  এক মেয়ের মা। মেয়ে এইচএসসি এবং ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।  পর্যন্তসাজেদা ফিলিপাইনমিয়ানমারব্যাংককভিয়েতনাম  নেপাল সফর করেছেন

দেশেবিদেশে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের প্রায় এক একর জমিতে ফসল বোনাসবজি রোপণপাইকারের কাছে বিভিন্নফসল বিক্রি করাসহ কৃষিকাজবাড়ির রান্নাবান্নাসহ অন্যান্য দায়িত্বও সাজেদাকে পালন করতে হচ্ছে। ফসল উৎপাদন,কীটনাশকের ব্যবহারবীজ ব্যবস্থাপনাবীজের গুণগত মান ঠিক রাখাকৃষকদের অধিকার আদায় নিয়ে আলোচনাসহ সংগঠনপরিচালনার সার্বিক দায়িত্বও পালন করতে হয়। কৃষকেরা যে খাদ্য উৎপাদন করছেনতা সঠিক উপায়ে হচ্ছে কি নাতাওদেখতে হচ্ছে

সাজেদা বিয়ের পরপর সরকার পরিচালিত কৃষক মাঠ স্কুলের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পান। ২০১২ সালে অ্যাকশন এইডেরদিনাজপুরে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বশীল কৃষি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হন। সেখান থেকে নারী নেতৃত্ব বিকাশব্যবসাসংক্রান্তনানান প্রশিক্ষণ পান। ফিলিপাইনে ‘ইয়ুথ ফার্মার’ হিসেবে পারিবারিক কৃষি নিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পান। প্রথম দিকেঅ্যাকশন এইড কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রী গঠনে সহায়তা করে। তবে বর্তমানে নিজস্ব ব্যয়েই স্বাধীনভাবে  সংগঠনটি পরিচালিতহচ্ছে। বীজের ব্যবসাসহ নানান ব্যবসা পরিচালনা করছে  সংগঠন।

অন্যান্য দেশের যাঁরা কৃষকতাঁরা অনেক শিক্ষিত এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষ। তাই যোগাযোগে এখন পর্যন্ত বেশ খানিকটা সমস্যাহচ্ছে বলে জানিয়ে সাজেদা বলেন, ‘এখন মন খারাপ হয়মনে হয় আর একটু লেখাপড়া শিখতে পারলে অন্যের সাহায্য ছাড়াইঅন্যরা যা বলে সব কথা বুঝতে পারতাম।

সাজেদা বেগমের নেতৃত্বে বিভিন্ন কৃষকসংগঠনের প্রতিনিধিরা বর্তমানে সরকার যাতে নারীদের কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়সেআন্দোলন করছেন। সাজেদা বেগমের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। জানালেনএলাকার বেশির ভাগ কৃষক বাড়িতে শাকসবজিলাগানোহাঁসমুরগি পালনসহ নানান কাজে ব্যস্ত। নিজেদের খাওয়ার পর তারা তা বাজারে বিক্রি করছেন। কৃষিকাজে আধুনিকপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার ফলে কৃষকদের কায়িক পরিশ্রম অনেকটা কমেছে

সাজেদা স্বপ্ন দেখেনএকসময় বাংলাদেশে এমন কৃষকনেতা তৈরি হবেযিনি শুধু ১৬টি দেশ নয়সারা বিশ্বের নেতৃত্ব দেবেন।

না, এই স্বপ্ন শুধু সাজেদা বেগমের নয়, এ স্বপ্ন আপনার আমার সবার। আর স্বপ্নটা শুধু কৃষিতেই আটকে রাখতে চাই না, আমরা স্বপ্ন দেখি সকল সেক্টরে আগামীর বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশের তরুণরা।

No comments:

Post a Comment