Enter your keyword

বিশ্বের প্রতি প্রন্তরে বাংলার মুখ

Saturday, October 15, 2016

হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির এক অনন্য নজির

হিন্দু পন্ডিত গিরিশ চন্দ্র সেন বাংলায় কোরান অনুবাদ করে ইতিহাস হয়ে আছেন, সেটা তো জানি। কিন্তু আজকের যুগে ভারতে যখন কট্টরবাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এবং তাদের দলীয় পান্ডারা যখন মুসলমানদেরকে ভারত থেকে বিতাড়িত করতে বদ্ধপরিকর। ঠিক সেই সময় আপনি যদি শুনেন ভারতেরই কোনো এক মন্দির প্রাঙ্গণে মুসলিম শিশুদের বিনা বেতনে কোরান শিক্ষার দায়িত্ব পালন করছে এক হিন্দু তরুণী তাহলে আপনার মনে কি ভাবনা হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। কেননা, এটা একেবারেই এক অবিশ্বাস্য মনে হবে।

হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা সত্য ঘটনা, খোদ মন্দির চত্বরে বসে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনের পাঠ দেওয়া হচ্ছে। আর যিনি এইপাঠ দিচ্ছেন তিনি নিজে একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছেবিরল এই দৃশ্যের দেখা মিলবে ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের আগ্রা শহরের সঞ্জয়নগর কলোনিতে। সেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা পূজা কুশওয়াহা নামের ১৮ বছরের এক তরুণী পবিত্র কোরাআনের পাঠশেখাচ্ছেন ৩৫ জন মুসলমান শিশুকে। স্থানীয় একটি মন্দির চত্বরে বসে চলে এই কোরআন পাঠ শিক্ষাদানের কাজ

পূজা কুশওয়াহা জানানবেশ কয়েক বছর আগে এলাকায় সঙ্গীতা বেগম নামের এক মুসলিম নারী শিশুদের কোরআন শেখাতেন।তাঁর কাছে পড়তে গিয়েই প্রথম কোরআন শেখার প্রতি আগ্রহ জন্মায় পূজার। তারপর ধীরে ধীরে সঙ্গীতা বেগমের কাছেকোরআন শিখতে থাকেন তিনি। স্পষ্ট উচ্চারণ এবং ভাষাগত জ্ঞান যথেষ্ট ভালো থাকায় খুব তাড়াতাড়িই কোরআন পাঠ আয়ত্তকরেন পূজা। এরপর ব্যক্তিগত কিছু কারণে সঙ্গীতা বেগম শিশুদের কোরআন শেখানোর কাজ ছেড়ে দেন। তবে এই দায়িত্ব তিনিদিয়ে যান তাঁর একনিষ্ঠ ছাত্রী পূজার ওপর

সেই থেকে শুরু। তারপর থেকেই সঙ্গীতা বেগমের মতোই অত্যন্ত দায়িত্ব এবং নিষ্ঠার সঙ্গে পূজা এলাকার শিশুদের কোরআনপাঠের শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে এর জন্য কোনো শিশুর কাছ থেকে পারিশ্রমিক নেন না পূজা

হিন্দু পরিবারের সন্তান পূজার নির্ভুল উচ্চারণ এবং ধর্মগ্রন্থ কোরআনের ওপর যথেষ্ট জ্ঞান থাকায় মুসলিম পরিবারেরঅভিভাবকরাও কোনো আপত্তি তোলেননি। বরং তাঁরা পূজার কাছে কোরআনের পাঠ নেওয়ার জন্য নিজেদের সন্তানদেরপ্রতিদিনই পাঠাচ্ছেন। ফলে ধীরে ধীরে বাড়ছে পূজার শিক্ষার্থীর সংখ্যা

কোরআন শিক্ষার্থী আলিশার (মা রেশমা বেগম বলেনএত কম বয়সে তাঁকে (তরুণীকোরআন পড়াতে দেখা অত্যন্তআশ্চর্যের। তাকে আমার সন্তানের শিক্ষক হিসেবে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। আমি এবং যেসব মাবাবাকে আমি চিনিসবাই তাঁরধর্মীয় পরিচয়কে গুরুত্ব দেয় না।

আর মহৎ এই কাজে পূজাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন এলাকার স্থানীয় মানুষরাও। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায়পূজার ছোট্ট বাড়িতে জায়গার অভাবে দেখা দেয়। যে কারণে এলাকার সবাই মিলে স্থানীয় একটি মন্দির চত্বরে স্থান করেদিয়েছেন পূজাকে। তাই সেই মন্দির চত্বরেই রোজ সন্ধ্যেবেলা খুদে শিক্ষার্থীদের কোরআন শিক্ষাদানের কাজ করছেন পূজা

আসলে আমরা তো এমন ভারতকেই দেখতে চাই যেখানে হিন্দু-মুসলিম নিবিড়ভাবেই থাকবে পরস্পরের ঘনিষ্ঠ। থাকবে পরস্পরের সহায় হয়ে।কিন্তু বিজেপির পান্ডারা কি সে সুযোগ ভারতবাসীকে দেবে?

No comments:

Post a Comment