ভারতীয় মিডিয়ায় যেন হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। এতদিন তাদের বিশ্বাস ছিল বাংলাদেশ ভারতের পূর্ণ অনুগত্যে চলে এসেছে। কিন্তু সম্প্রতি চীনের ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ প্রজেক্টে যুক্ত হয়ে বিশাল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে লগ্নি হওয়াতে তাদের মধ্যে যেন হাহাকার পড়ে গেছে। সৌদি প্রবাসী ডা. আরিফুর রহমানের ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই ফুটে উঠেছে।
বাংলাদেশ চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে অবকাঠামো উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়ায় অন্যদের একটু আনইজি ফিলিংস হতেই পারে। প্রতিবেশীভারত দিয়েছে ২ বিলিয়ন ডলার, সেখানে চীন অবকাঠামোতে দিয়েছে তুরুপের মতো এক দানে ২৪ বিলিয়ন ডলার, প্রাইভেটকোম্পানিগুলি দিয়েছে আরো প্রায় ১৫ বিলিয়ন। হিসাব করলে আমাদেরই চোখ বড় হয়ে যায়, সেখানে ভারতীয়দের তো চিৎকার দিয়েই কান্নাকাটি করার কথা।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ আরচীনের যৌথ বিবৃতিতে‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার’ কথা বলা হয়েছে। কৌশলগত অংশীদারিত্বের কথা উঠলেই নিরাপত্তা ও সামরিকযোগাযোগের আলোচনা চলে আসে। এই কৌশলগত অংশীদারিত্বের কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি কোনো তরফ থেকেই।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে দুই দেশের দাবি। তবে ভারতের সঙ্গেও‘কৌশলগত’ অংশীদারিত্ব থাকার কথা সরকারি পর্যায়ে কখনও বলা হয়নি।
আর ভারতের হিন্দু পত্রিকার প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ বলেছে কারো সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গি আক্রমণ করা ঠিক নয়। অন্ধআনুগত্যের যে বিশ্বাস এতদিন তাদের মাথায় ছিল তাতে সন্দেহ ঢুকে গেছে, তা বোঝা গেছে তাদের সাংবাদিকদের প্রশ্ন করারঢঙেও।
তবে দ্য হিন্দুতে একই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ–চীনের মধ্যকার সম্পর্ক, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা নীতি এবং অন্যান্য বিষয়েভারতের উদ্বেগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করার পরও, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমেও চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশসফর নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয়েছে। সে দেশের মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমগুলোতে চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর ওবিপুল অর্থ ঋণের বিষয় নিয়ে উদ্বেগের আভাস দিয়ে খবর প্রকাশ করেছে।
ভারতের প্রভাবশালী হিন্দি দৈনিক জাগরণের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব কমাতে চীনের কৌশল‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। অথচ গত দুই বছর ধরে এ চুক্তিতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছিল শেখহাসিনা সরকার। কিন্তু হঠাৎ করে কেন এই চুক্তি করলো বাংলাদেশ ?
টাইম অব ইন্ডিয়া গ্রুপের হিন্দি দৈনিক নব ভারত, চীন–বাংলাদেশ সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হওয়ায় ভারতের ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টিকরবে উল্লেখ করে বলেছে, — ভারত এই অঞ্চলে কাজ করার ক্ষেত্রে নিজের কৌশলগুলো আবারও ঝালাই করা উচিত।
এবিপি নিউজ বলেছে, ভূ–রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা বঙ্গপোসাগরের কোলের বাংলাদেশে চীনা প্রেসিডেন্টের সফরঅনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের একাংশ ভারত বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ, যাদের সঙ্গেবাংলাদেশের দীর্ঘ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে তাতে কোনও প্রভাব পড়বে কি না তা বোঝার চেষ্টা করছেন।
বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকদের তরফ থেকে এতো ম্যাচিওর্ড পদক্ষেপ অভাবনীয় লাগছে। কেন যেন মনে হচ্ছে কারো অন্ধআনুগত্যের দিন থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ, তাই আত্মবিশ্বাস আর আলোর ঝলকানি দেখতে পাচ্ছি সহসাই প্রতিটিপদক্ষেপে।
সে কারণেই মূলত ভারতীয় গণমাধ্যম ভাবছে, বাংলাদেশ কি ইউটার্ন নিচ্ছে?
No comments:
Post a Comment