জার্মানীতে ট্রেনে ISIS এর সমর্থনে আফগান কিশোরের আক্রমণের পর একটা লেখায় আশংকা প্রকাশ করে লিখেছিলাম যে, ISIS এর একমাত্র লক্ষ্য সারা বিশ্বে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া আর তার সাথে মধ্যপ্রাচ্য এবং অপরাপর মুসলিম দেশ গুলোকে অশান্ত করে রাখা ! কারণ, যেই কালো শক্তি গুলো ISIS কে সৃষ্টি করেছে, পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে আর নিয়ন্ত্রণ করছে তারা এটাই চায় !
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ISIS আর তাদের পৃষ্ঠপোষকরা নাহয় এটা চায় বুঝলাম ! কিন্তু ফ্রান্স , বেলজিয়াম, জার্মানী , বাংলাদেশ সহ নানা জায়গায় যেসব ISIS হামলা হয়েছে সেগুলোতে হামলাকারীরাতো সব মুসলমান ছিল ! এটাতো মিথ্যে নয় ! তাছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব মানুষগুলো সিরিয়াতে গিয়ে ISIS এ যোগ দিল তারা তো সব মুসলমান ! এটাতো মিথ্যে নয় ! ISIS চাইল আর তারা চলে গেলো ?! কেন গেল ?! তাদের বিবেক নাই ?!
কারণ আগেই বলেছি তারা এই আর্টের মাষ্টার ! আজকে মুসলমানদের যেই দুরবস্থা তার চেয়েও ভয়ংকর খারাপ অবস্থা থেকে তারা আজকের অবস্থায় এসেছে ! বলছিলাম ইসরাইলের কথা ! মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম জঙ্গি সংগঠন তাদেরই তৈরি ১৯২১ সালে ! যার নাম হাগানাহ !
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ISIS আর তাদের পৃষ্ঠপোষকরা নাহয় এটা চায় বুঝলাম ! কিন্তু ফ্রান্স , বেলজিয়াম, জার্মানী , বাংলাদেশ সহ নানা জায়গায় যেসব ISIS হামলা হয়েছে সেগুলোতে হামলাকারীরাতো সব মুসলমান ছিল ! এটাতো মিথ্যে নয় ! তাছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব মানুষগুলো সিরিয়াতে গিয়ে ISIS এ যোগ দিল তারা তো সব মুসলমান ! এটাতো মিথ্যে নয় ! ISIS চাইল আর তারা চলে গেলো ?! কেন গেল ?! তাদের বিবেক নাই ?!
ব্যাপার হলো, তারা সবাই মুসলমান ছিল এটা সত্যি ! ISIS যোদ্ধাদের নিচের দিকে যেসব যোদ্ধা আছে তারা সবাই মুসলমান ; এটাও সত্যি ! কিন্তু ISIS চাইল বলে তারা জঙ্গি হয়ে গেলো এটা পুরোপুরি ঠিক নয় ! আসলে ISIS এর জন্য নয় , ISIS এর জায়গায় অন্য কোন সন্ত্রাসী সংগঠন এলে তারা সেখানেই যেতো ! কারণ মুসলিমদের জংগী হবার পরিবেশ তৈরি হয়েছে ! মূল ব্যাপারটা হল , মুসলমানদের মাঝে এক ধরনের জঙ্গিবাদী প্রবণতা তৈরি হয়েছে ! যার পেছনে বেশ কয়েকটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয় কাজ করছে, যেমনঃ অসহায়ত্ব , সহমর্মীতা, ক্রোধ, হতাশা , ঘৃণা, প্রতিহিংসা, প্রতিশোধস্পৃহা এবং এরকম আরও কয়েকটি বিষয় !
কিসের প্রতি এই সহমর্মীতা, ক্রোধ, হতাশা , ঘৃণা ?!
সারা বিশ্বজুড়ে গত কয়েক দশক ধরে মুসলিম দেশ গুলো কোন না কোন ভাবে ষড়যন্ত্র , যুদ্ধ, অত্যাচার আর জুলুম- নির্যাতনের স্বীকার ! আর ফিলিস্তিন সমস্যাতো শুরু হয়েছে সেই ১৯১৭ সাল থেকে ! প্রতিটি ঘটনা বিশ্বের অবশিষ্ট মুসলিমদের মনে স্বজাতীয় ভাই-বোনদের জন্য সহানুভূতি , সহমর্মিতা তৈরি করেছে ! সেই সাথে তাদের মনে জাগ্রত হয়েছে ক্রোধ, ঘৃণা, প্রতিহিংসা, প্রতিশোধস্পৃহা ! তাদের আশা ছিল মুসলিম দেশগুলোর সরকার গুলো এর প্রতিবাদ করবে প্রতিকার করবে ! কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলিম সরকার গুলো ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছে ! তারা নিজেদের আরাম আয়েশে ব্যাস্ত ছিল , যখন তাদের মুসলিম ভাতৃদেশগুলো আগুনে পুড়ছিল ! প্রতিটি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তারা তাদের প্রভাব খাটাতে ব্যার্থ হয়েছে ! সরকার গুলোর ব্যার্থতা সামগ্রিকভাবে মুসলিমদের মাঝে তৈরি করেছে হতাশা ! আর এই সহমর্মীতা, ক্রোধ, হতাশা , ঘৃণা, প্রতিহিংসা, প্রতিশোধস্পৃহা এবং এরকম আরও বিষয় গুলো দীর্ঘদিন ধরে ধীরে ধীরে মুসলিম সমাজে এক ধরনের দৃষ্টি ভঙ্গী তৈরি করেছে ! যা এক পুরুষ থেকে আরেক পুরুষে পারিবারিক সংস্কৃতির আড়ালে প্রচ্ছন্ন ভাবে স্থানান্তরীত হয়েছে ! এটা এমন এক ধরনের Dogma যেটা প্রচ্ছন্ন কিন্তু শক্তিশালী ! সবশেষে এবার যখন একে একে আরব দেশ গুলোর পতন ঘটলো তখন মুসলিমদের মাঝে অসহায়ত্ব ভর করল ! তারা সমস্ত সিস্টেমের উপর আস্থা হারাল ! কারণ মানুষ এখন তথ্যসমৃদ্ধ ! আর অনিয়ম দুর্ণীতির মাঝে দীর্ঘদিন সহাবস্থান করতে করতে মানুষ এখন সব চক্রান্তই বুঝতে পারে ! ক্ষমতাসীনরা ভাবে মানুষ বোকা , কিন্তু আসলেতো ব্যাপার উল্টো ! আর এই সমস্ত বিষয় তাদের আইন নিজের হাতে তুলেনিতে আগ্রহী করে তুলছে আর তারা জঙ্গি বাদের পথ বেছে নিচ্ছে ! তাছাড়া যুদ্ধ বিধ্বস্ত মুস্লিমদেশ গুলোর যারা জীবিত কিন্তু স্বজন হারানোর ব্যাথা ,সর্বসান্ত হবার উদ্বাস্তু হবার যন্ত্রণায় কাতর তারা তো প্রতিশোধের আগুণ বুকে নিয়ে চলেছে !
সে জন্যই শুরুতেই বলেছি মুসলিমদের জংগী হবার পরিবেশ তৈরি হয়েছে !
আর মুসলিমদের এই মানসিক অবস্থার কথা ISIS আর তাদের পৃষ্ঠপোষকরা ভালো করেই জানে, বোঝে ! কারণ এই পরিস্থিতি যে তাদেরই সৃষ্টি !
এখন প্রশ্ন হল , মুসলিমরা প্রতিশোধ নিতে চাইলে তো ঐসব পৃষ্ঠপোষকদেরই ক্ষতি ! তারা কেন এটা চাইবে ?!
উত্তর হল, চাইবে ! কারণ , জঙ্গিবাদ তাদের কাছে একটা শিল্পেরমত ! আর তারা এই আর্টের মাষ্টার ! তাই মুসলিমদের প্রতিশোধ স্পৃহাকে তারা দক্ষতার সাথে মুসলিমদেরই বিরুদ্ধে ব্যাবহার করে চলেছে ! এমনকি কোন রকম সামরিক ব্যায় বা প্রশিক্ষণ দেয়া ছাড়াই তারা অগণিত সৈন্য তরী করে ফেলেছে ! যারা যেকোন সময় , বিনা নোটিশে যে কোন দেশে আক্রমণ করতে সক্ষম ! যার প্রমাণ মেলে জার্মানীতে বন্দী ISIS ফেরত হ্যারী সারফো ! যাকে ISIS সিরিয়ায় না রেখে তার দেশে ফেরত চলে যেতে বলেছে ! কারণ হ্যারী সারফোর মত আগ্রহী প্রতিশোধের নেশায় অন্ধ বোকারা যদি ইউরোপে, জার্মানীতে তথা নিজ দেশে ISIS নির্দেশ দেয়া মাত্র জঙ্গি হামলা চালায় তাহলে ISIS কে আর ইউরোপে, জার্মানীতে ঢুকে আক্রমণ করার কষ্ট করতে হয় না; কারণ তাদের সেই মুরদও নাই ! তাহলে তারা সহজেই পৃথিবী জুড়ে যুদ্ধ তথা মুসলিম বিদ্ধেশ ছড়িয়ে দিতে পারে !!!
এখন প্রশ্ন হল তারা এতটা নিশ্চিত হচ্ছে কেমন করে ?

তখনো ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মও হয়নি ! নানা রকম জঙ্গি কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে তারা ইসরায়েল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাবার পথ তরান্বিত করে ! পরে এই জঙ্গি সংগঠনটিই পরিণত হয় ইসরায়েলই ডিফেন্স ফোর্সে !
তার জঙ্গিবাদ আর জঙ্গিবাদের ব্যাবহার এদের চেয়ে আর কারো ভালো বোঝার কথা নয় ! বাস্তবে কেউ বুঝতে পারছেও না ! তারা সফল !!!
ভাবতে কষ্ট লাগে যে , মুসলমানদের ধ্বংস করে মুসলমানদেরই আবার ব্যাবহার করা হচ্ছে মুসলমানদের অবশিষ্টটুকু নিঃশেষ করার জন্য ! আর মুসলিমরা সেটা বুঝতে পারছে না !
তাই আবারও বলি মুসলিম তরুণদের, তোমরা ভুল পথে ধর্মের নামে ভাই আর অধর্ম করোনা ! নিজেদের অপার সম্ভাবনাকে ক্ষুদ্র বুলেটের মুখে শেষ করে দিওনা ! নিজেদের গড়, তাতে সমাজ গোড়ে উঠবে , তাতে দেশ গোড়ে উঠবে, তাতে বিশ্বে বিবেকবান মানুষের অভাব পূরণ হবে, বিশ্ব সমস্যার সমাধানে বিবেকবান মানুষের উপস্থিতি ও ভূমিকা নিশ্চিত হবে ! আর ইসরাইলীদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করোনা , সমস্ত ইসরাইলী খারাপ নয় ! তারাও মানুষ , আমাদেরই মত !!! খারাপ তাদের মাঝে বিশেষ এক দল মানুষ !
No comments:
Post a Comment