সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিজেকে কতটাই না উচ্চতায় তুলে ধরতে পারে। পৃথিবীজুড়ে যত সফল মানুষ আছেন, তাদের একটা বিরাট অংশই শুরু করেছিলেন শুণ্য হাতে।তারা শুধু নিরলস প্রচেষ্টা এবং পরিশ্রমের কারণেই সফলতা পেয়েছেন।নুরুল আবছারখান মামুন এমনই একজন বাঙালি তরুণ। কর্মগুণে যিনি লেবার থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।
কয়েক বছর আগের ঘটনা, মামুন লেবার থেকে ইঞ্জিনায়র হয়ে চমকে দিয়েছেন আমিরাতকে। সেইসাথে চমকে গেছে গোটাদুবাইয়ের বাঙালি সমাজ।
মামুনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মাত্র ৯ম শ্রেণি হলেও নিষ্ঠা ও মেধায় লেবার থেকে আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ারের পদ দখল করে নেন দুবাইমিউনিসিপালিটির জেনারেল ম্যানেজারের ব্যক্তিগত কোম্পানী লোতাহ গ্রুপ অব কোম্পানীতে।
মামুনের বাড়ি ফেনীর উত্তরধলিয়াতে। একদম গরীর ঘরের ছেলে সে। সেই শৈশবে বাবা আব্দুল আউয়াল খানকে হারিয়েছেন।বাবাকে খুন করেছে সন্ত্রাসীরা। দুই ভাই, দুই বোন নিয়ে মামুনের মা মাজেদা বেগম অনেক কষ্ট করে দিন কাটিয়েছেন। তখনতারা সবাই ছোট। একবেলা দু’মুঠো ভাত জুটলেও আরেক বেলা হয়তো না খেয়েই কাটাতে হয়েছে। এমন কষ্ট করে বড়ভাই আবুছুফিয়ান খান এইচএসসি পাস করলেও অভাব অনটনের সংসারে মামুনের ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরেই নেমে পড়তে হয় জীবনযুদ্ধে। সেই থেকে একটা প্রতিজ্ঞা ছিল মনে, একদিন ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ওঠবেন। সময় পেলেই কাগজ–কলমে যুদ্ধে লেগে যেতেন।করে ফেলতেন অসাধারণ ড্রয়িং।
তখন দেশে নির্বাচনের উত্তাল সময়। ফেনীতে আসলেন স্থানীয় এমপি মোশারফ হেনী। মামুন উনার কাছে গিয়ে তাদের দুর্দশারকথা বল্লে তিনি সময়–সময় মামুনদের আর্থিক সাহায্য করতেন। নির্বাচনের দুই বছর পর ওই এমপিকে আকুতি করে মামুন ।বিদেশ পাঠানোর জন্য। এমপি তার নিজের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মামুনকে দুবাই পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
শুরু হয় মামুনের স্বপ্নগড়ার সংগ্রাম। লেবার হয়ে কাজ করলেও মামুনের চোখ ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর দিকে। ৫ বছর লেবারজীবন চলতে থাকে। এরই মাঝে আমিরাতের মোবাইল কোম্পানী ‘ডু’ তার নিজস্ব ভবনের জন্য ডিজাইন আহবান করলে মামুনসেখানে একটা ড্রয়িং জমা করে। তার ড্রয়িং নির্বাচিত তালিকায় স্থান পায়। তার সেই পত্রটি লোতাহ কোম্পানীর এমডি’র কাছেদেখালে এমডি মামুনকে একই কোম্পানীতে সহকারী ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পদোন্নতি দেন। সেই সাথে বেড়ে যায় মামুনেরবেতনভাতাও।
আসলে চেষ্টায় মানুষ কি না হতে পারে!
No comments:
Post a Comment