Enter your keyword

বিশ্বের প্রতি প্রন্তরে বাংলার মুখ

Friday, September 30, 2016

মনে আছে প্রীতিলতার কথা

এক বিপ্লবী নারী তার মাকে লিখেছিল, ‘মাগো, অমন করে কেঁদো না! আমি যে সত্যের জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি কি তাতে আনন্দ পাও না? কী করব মা? দেশ যে পরাধীন! দেশবাসী বিদেশির অত্যাচারে জর্জরিত! দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলভাবে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা! তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা? একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উৎসর্গ করতে পারবে না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে?’

হ্যাঁ, ছয় সন্তানের জননীর কাছে একটি সন্তানের আত্মাহুতি চেয়েছিলেন দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য, আর সেই সন্তানটি ছিলেন তিনি নিজেই। মনে পড়ে কে সেই বিপ্লবী নারী?

না, সে আর অন্য কেউ নয়, চট্টগ্রামের বিপ্লবী কন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। যিনি ছিলেন সদা অবিচল তাঁর কর্তব্যনিষ্ঠায়, দেশপ্রেম চেতনায়, মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়। যাঁর কাছে তাঁর নিজের জীবনের চেয়েও বেশি মূল্যবান ছিল দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মুক্তি।

১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।পরনে মালকোঁচা ধুতি। মাথায় গৈরিক পাগড়ি, গায়ে লাল ব্যাজ লাগানো শার্ট। ইনিই দলনেতা। এক হাতে রিভলবার, অন্য হাতে হাতবোমা। দলের সদস্যসংখ্যা সাত। সবার পরনে রাবার সোলের কাপড়ের জুতো। সবাই প্রস্তুত। দলনেতার মুখে ‘চার্জ’ শুনতেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল শত্রুর ওপর। ইউরোপিয়ানরা তখন ক্লাবে মত্ত নাচ–গানে। পিকরিক অ্যাসিডে তৈরি বোমাটি বর্জ্রের মতো ভয়ংকর শব্দে ফেটে পড়ল; হলঘরে তখন শুধু ধোঁয়া। দলনেতাই এগিয়ে গেল সবার আগে। অথচ এটাই তার প্রথম অভিযান। বোমার বিস্ফোরণ, গুলির শব্দ, শত্রুর মরণ চিৎকার—সব মিলে এলাকাটা যেন পরিণত হলো এক দক্ষযজ্ঞে!
এটা কোনো অ্যাডভেঞ্চার ফিল্মের দৃশ্য নয়। এটি ইতিহাসের এক অনন্য ঘটনা। আমরা আরও রোমাঞ্চিত হই—যখন জানি, ২১ বছরের সেই দলনেতা পুরুষ বেশে একজন নারী! বাংলাদেশেরই নারী! নাম প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।

আক্রমণ শেষে ফেরার সময়ে প্রীতিলতা গুলিবিদ্ধ হন। এ অবস্থায় ধরা পড়ার আগে সঙ্গে রাখা পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। কারণ, ধরা পড়লে বিপ্লবীদের অনেক গোপন তথ্য ব্রিটিশ পুলিশের কাছে ফাঁস হয়ে যেতে পারে।

প্রীতিলতা মাত্র ২১ বছর বয়সে মৃত্যুকে বরণ করে নেন। তাঁর আত্মদান বাংলা ও ভারতের বিপ্লবীদের আরো উদ্দীপিত ও বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে সক্রিয় করে তোলে।

প্রীতিলতার মৃতদেহের পোশাকে নিজ হাতে লেখা ছিল, ‘আমরা দেশের মুক্তির জন্য এই সশস্ত্র যুদ্ধ করিতেছি। অদ্যকার পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি অংশ। ব্রিটিশরা জোরপূর্বক আমাদের স্বাধীনতা ছিনাইয়া লইয়াছে।’

প্রীতিলতা আজ নেই। কিন্তু তাঁর সেই বিপ্লবী চেতনার স্ফুলিঙ্গ এখনো আমাদের উজ্জীবিত করে দেশপ্রেম এবং স্বাধিকার আন্দোলনে। তিনি মুক্তির আলোকবর্তিকা হয়ে চিরজাগরূক হয়ে আছেন আমাদের হৃদয়তন্ত্রীতে।

No comments:

Post a Comment