Enter your keyword

বিশ্বের প্রতি প্রন্তরে বাংলার মুখ

Wednesday, March 8, 2017

বখতিয়ার খিলজীর বাংলা বিজয়

By On 5:56:00 AM

কয়েক হাজার অক্ষরের বিন্যাসে লেখা ইতিহাসের বইটা যতটা নীরস লাগে, মূল ইতিহাস কিন্তু ততোটা রসহীন হয় না। প্রতিটি ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে থাকে অজস্র উত্থান-পতন, রক্তপাত, দুর্বিষহ বাস্তবতা। “বখতিয়ার খিলজী ১২০৪ সালে মাত্র ১৭ জন অশ্বারোহী সেনা নিয়ে নদীয়ার রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে বাংলা জয় করেন”- ইতিহাসের বইয়ের এই লাইনটি নিশ্চয় সবার ঝাড়া মুখস্ত রয়েছে? যদিও এর আগের বা পরের কোনো কিছুই আমাদের ঠিকমতো জানা নেই। চলুন জেনে নেয়া যাক সেই বখতিয়ার খিলজী আর তার দুর্ধর্ষ অভিযানের কথা।
শিল্পীর চোখে বখতিয়ার খিলজী : kalayi.blogspot.com

খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতকের গোড়ার কথা। তখন বাংলায় রাজত্ব করতেন সেন বংশের রাজা লক্ষণ সেন। তিনি নদীয়ায় বাস করতেন। একদিন তার দরবারের পন্ডিতরা তাকে বললেন যে, তাদের প্রাচীন গ্রন্থে লিখিত আছে, বাংলা তুর্কীদের দখলে যাবে। ততদিনে সমগ্র উত্তর ভারত তুর্কীরা অধিকার করেছে এবং বখতিয়ার খিলজী বিহার জয় করেছেন।
রাজা ব্রাহ্মণ পন্ডিতদের কাছে জানতে চাইলেন প্রাচীন গ্রন্থে বাংলা আক্রমণকারীর দেহাবয়ব সম্পর্কে কোনো ইঙ্গিত আছে কিনা। জবাবে পন্ডিতগণ জানান, যে তুর্কী বাংলা জয় করবেন, তিনি আকৃতিতে খাটো এবং দেখতে কুৎসিত হবেন, তার হাতগুলো হাঁটু পর্যন্ত লম্বা হবে। বিশ্বস্ত লোক পাঠিয়ে রাজা লক্ষণ সেন নিশ্চিত হন যে, বিহারজয়ী বখতিয়ার খিলজীর সাথে উক্ত বিবরণগুলি মিলে যায়। তুর্কী আক্রমণ এক প্রকার অত্যাসন্ন বুঝেও লক্ষণ সেন তা আমলে নেন নি। ব্রাহ্মণ পন্ডিতগণ রাজার অনুমতি ছাড়াই নদীয়া ছেড়ে চলে যান।
ঐতিহাসিক মিনহাজ-ই-সিরাজ তার ‘তবকাত-ই-নাসিরি’ গ্রন্থে উপরোক্ত তথ্যটি প্রকাশ করেন। ঘটনাটি সত্যিই ঘটেছিলো কিনা তা জোর দিয়ে বলার উপায় নেই। কিন্তু তার অনতিকাল পরেই বখতিয়ার খিলজী নদীয়া আক্রমণ করেন এবং বাংলায় মুসলিম শাসন সাম্রাজ্য স্থাপন করেন।
উপমহাদেশে মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তারের তিনটি স্তর দেখা যায়। প্রথমত, আরবগণ মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে ৭১২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু ও মুলতান জয় করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে তুর্কী সুলতান আমীর সবুক্তগীন ও তার পুত্র সুলতান মাহমুদ দশম শতাব্দীর শেষ দিকে বারবার উপমহাদেশ আক্রমণ করে লাহোর পরিবেষ্টিত এলাকা স্বীয় গজনী রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। তৃতীয় পর্যায়েও তুর্কীরাই আক্রমণ পরিচালনা করে। এইবার নেতৃত্ব দেন মুহাম্মদ ঘুরী। এবারের আক্রমণে তুর্কীরা দিল্লীকে কেন্দ্র করে উপমহাদেশে স্থায়ী মুসলিম সাম্যাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। বখতিয়ার খিলজীর বাংলা আক্রমণ এই তৃতীয় পর্যায়ের আক্রমণেরই অংশ।
ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী আফগানিস্তানের গরমশির এলাকার অধিবাসী ছিলেন। তিনি তুর্কীদের খিলজী সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন। তার বাল্যজীবন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে মনে করা হয় যে, তিনি দারিদ্রের নিষ্পেষণে স্বদেশ পরিত্যাগ করে জীবিকার সন্ধানে বের হন। মুহাম্মদ ঘুরী তখন ভারতীয় উপমহাদেশে অভিযান চালাচ্ছিলেন। বখতিয়ার, ঘুরীর সৈন্যদলে চাকুরীপ্রার্থী হয়ে ব্যর্থ হন। তখন নিয়ম ছিলো, প্রত্যেক সৈন্যকে নিজ ঘোড়া ও যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হতো। সামর্থ্যের অভাবে বখতিয়ার ঘোড়া বা ঢাল-তলোয়ার কিছুই যোগাড় করতে পারেননি। তাছাড়া খাটো দেহ, লম্বা হাত ও কুৎসিত চেহারার বখতিয়ার খিলজী সেনাধক্ষ্যের দৃষ্টিও আকর্ষণ করতে পারেননি।
গজনীতে ব্যর্থ হয়ে বখতিয়ার দিল্লীর সম্রাট কুতুবউদ্দিন আইবেকের কাছে আসেন এবং সেখানেও ব্যর্থ হন। অতঃপর বখতিয়ার পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে বদাউনে গিয়ে পৌঁছেন। বদাউনের শাসনকর্তা মালিক হিজবর-উদ-দীন তাকে নগদ বেতনে চাকুরীতে রাখেন, তবে এমন চাকুরীতে বখতিয়ার সন্তুষ্ট ছিলেন না। কিছুদিন কাজ করার পর তিনি অযোধ্যায় চলে যান। অযোধ্যার শাসক হুসাম-উদ-দীন বখতিয়ারের প্রতিভা অনুধাবন করেন এবং তাকে ভিউলী ও ভগত নামে দু’টি পরগনার জায়গীর প্রদান করে মুসলিম রাজ্যের পূর্বসীমান্তে সীমান্তরক্ষীর কাজে নিযুক্ত করেন। এখানে বখতিয়ার তার ভবিষ্যৎ উন্নতির সম্ভাবনা দেখতে পান।
বখতিয়ারের জায়গীর সীমান্তে অবস্থিত হওয়ায় তিনি পার্শ্ববর্তী হিন্দু রাজ্যগুলির সংস্পর্শে আসেন এবং স্বীয় রাজ্য বিস্তারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পার্শ্ববর্তী হিন্দু রাজ্যগুলিতে পূর্বে থেকেই তুর্কী আক্রমণের আতঙ্ক লেগে ছিলো। তার উপরে পারষ্পারিক অন্তর্বিরোধ লেগে থাকাতে সংঘবদ্ধ হওয়া তাদের জন্য সম্ভব ছিল না। বখতিয়ার খিলজীর জন্যে এটা ছিল উপযুক্ত সুযোগ। তিনি কিছু সৈন্য সংগ্রহ করে এক এক করে হিন্দু রাজ্য আক্রমণ ও লুট করতে থাকেন। এই সময় ঠিক রাজ্য বিস্তার করা তার উদ্দেশ্য ছিল না, বরং ধন-সম্পদ হস্তগত করে একটি বিরাট সৈন্যবাহিনী গঠন করে বড় একটা কিছু করাই তার পরিকল্পনা ছিল। ধীরে ধীরে তার নাম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে চারিদিক থেকে ভাগ্যান্বেষী মুসলিমরা, বিশেষ করে বখতিয়ারের স্বীয় খিলজী সম্প্রদায়ভুক্ত লোকজন এসে তার সাথে যোগ দিতে থাকে।
বৌদ্ধভিক্ষুদের হত্যা করেন বখতিয়ার খিলজী : en.wikipedia.org
এইভাবে অগ্রসর হবার সময় একদিন তিনি প্রাচীরবেষ্টিত দুর্গের ন্যায় একটি স্থানে এসে উপস্থিত হন। সেখানেও স্বভাবসুলভ চড়াও হয়ে তিনি এর বহু অধিবাসী হত্যা করেন এবং কোনো বাধা ছাড়াই জায়গাটি দখল করে নেন। সেখানকার অধিবাসিরা সকলেই ছিল মুন্ডিত মস্তক, এরা ছিল বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং স্থানটি ছিল বই-পুস্তকে পরিপূর্ণ। জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনি জানতে পারেন সেটি কোনো দুর্গ নয়, বৌদ্ধবিহার। বিহারটির নাম ওদন্তপুরী বিহার। ঐ সময় থেকে মুসলিমরা জায়গাটির নাম দিলেন বিহার বা বিহার শরীফ। জায়গাটি সেই নামেই এখনও পরিচিত। এভাবেই বিহার জয় করে নেন বখতিয়ার খিলজী। বিহারে এখনও বখতিয়ারপুর নামে একটি জায়গা আছে। এছাড়া এই লাগামহীন বিজয়ের পথে বখতিয়ার ঐতিহাসিক নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ও ধ্বংস করেন।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ : en.wikipedia.org
এর পরের বছর আরও বিপুল সংখ্যক সৈন্য নিয়ে বখতিয়ার নদীয়া আক্রমণ করেন। তিনি এতোই ক্ষিপ্রতার সাথে ঘোড়া চালনা করেন যে, তার সাথে মাত্র ১৮ জন সেনা আসতে পেরেছিলো। আমাদের দেশে প্রবাদ আছে যে, ১৭ জন অশ্বারোহী বাংলা জয় করেন। কথাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। ঐতিহাসিক মিনহাজ সুস্পষ্টভাবে বলেন, বখতিয়ার খিলজী ১৮ জন অশ্বারোহী নিয়ে নদীয়া পৌঁছেন এবং তার মূল বাহিনী পেছনে আসছিল।
রাজা লক্ষণ সেনের রাজধানী ছিল ঢাকার বিক্রমপুরে। তিনি বৃদ্ধ বয়সে গঙ্গাপাড়ের পবিত্র তীর্থস্থান নদীয়ায় বাস করছিলেন। তিনি একজন সাহসী যোদ্ধা এবং সুশাসক ছিলেন। নিজ রাজ্য রক্ষার কোনো পূর্ব প্রস্তুতি তিনি নেন নি এমনটা ধরা যায় না। ঐতিহাসিকগণ মনে করেন, তিনি রাজ্যের মূল প্রবেশপথ তেলিয়াগড় গিরিপথে প্রহরার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু সুকৌশলী বখতিয়ার খিলজী সেই পথে না গিয়ে দক্ষিণ দিকের জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা ঝাড়খন্ডের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হন।
তিনি তার বাহিনীকে ছোট ছোট দলে ভাগ করেন এবং নিজে এরকম একটি দলের অগ্রভাগে ছিলেন। ফলে যখন তিনি নদীয়া পৌঁছেন, কেউ ভাবতেও পারেননি যে তুর্কী বীর বখতিয়ার খিলজী বাংলা জয় করতে এসেছেন। সবাই তাকে সাধারণ ঘোড়া ব্যবসায়ী ধরে নেয়। খিলজী সোজা রাজা লক্ষণ সেনের প্রাসাদদ্বারে উপস্থিত হন এবং দ্বাররক্ষীদের হত্যা করেন। রাজা তখন মধ্যাহ্নভোজে লিপ্ত ছিলেন। খবর শুনে তিনি নগ্নপদে প্রাসাদের পশ্চাৎদ্বার দিয়ে পলায়ন করেন এবং বিক্রমপুরে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
বখতিয়ার খিলজী ৩ দিন যাবৎ নদীয়া লুটপাট করেন। লক্ষণ সেনের বিপুল ধন-সম্পদ, ভৃত্যবর্গ ও অনেক হস্তী তার হস্তগত হয়। প্রায় বিনা যুদ্ধেই বখতিয়ার নদীয়া জয় করে নেন। মনে রাখতে হবে, তিনি সমগ্র বাংলা জয় করেননি, বাংলার একটি অংশ জয় করেছিলেন মাত্র। তিনি নতুন জয় করা রাজ্যের নাম রাখেন ‘লখনৌতি’।
নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যে তিনি সুশাসনের ব্যবস্থা করেন। তার সাথে অভিযানে সময় এবং পরবর্তীতে যেসব মুসলিম সেখানে বসবাসের জন্য আসেন, তাদের জন্য তিনি মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকাহ নির্মাণ করেন। তিনি জানতেন, শুধু সামরিক শক্তির উপরেই একটি রাজ্যের প্রতিরক্ষা নির্ভর করে না, পরিপূর্ণ শান্তির জন্য চাই অভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা। আর তাই তার প্রতিষ্ঠিত মুসলিম রাজ্যের স্থায়ীত্ব বিধানে তিনি সুষ্ঠু মুসলিম সমাজ তৈরির প্রয়াস নেন।
বখতিয়ারের নামে বখতিয়ারপুর জংশন, বিহার
হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছে বখতিয়ার খিলজী শুধুই একজন খুনী, লুটেরার নাম। তবে এটাও ঠিক, ইতিহাসের একটি অংশের ধ্বংস তার হাতে এবং আরেকটি অংশের সৃষ্টি তার হাতে। তার আমলে ভারতবর্ষে বিপুল পরিমাণ মানুষ ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। বাংলাদেশের খ্যাতিমান কবি আল মাহমুদ তার ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ কাব্যগ্রন্থে বখতিয়ার খিলজীকে একজন প্রশংসনীয় বীর হিসেবে চিত্রায়িত করেছেন। যদিও এই দুর্ধর্ষ বীরের পরিসমাপ্তি সুখকর হয়নি। বাংলা বিজয়ের অনতিকাল পরে তিনি তিব্বত আক্রমনে বের হন। এই অভিযানে তিনি শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হন এবং তার বিপুল সংখ্যক সেনা ধ্বংস হয়ে যায়। মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ১২০৬ সালে বখতিয়ার খিলজী ইহলোক ত্যাগ করেন।
বাংলায় মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন করে দেন বখতিয়ার খিলজী

‘হোয়াইট ডেথ’ নামের এক মৃত্যুদূতের গল্প

By On 5:46:00 AM

১৯০৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর, দক্ষিণ ফিনল্যান্ডের সাউথ কারেলিয়া অঞ্চলের রাউতজার্ভি পৌরসভায় জন্ম নেয় এক ছেলে, নাম তার সিমো হায়েহা। সময়ের সাথে সাথে একসময় হায়েহাও বড় হতে থাকেন। আট-দশটা সাধারণ ছেলের মতোই কেটে যাচ্ছিলো তার শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো। কৃষিকাজ ও শিকার করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন তরুণ হায়েহা। অবশেষে ১৯২৫ সালে বিশ বছর বয়সে ফিনল্যান্ডের রক্ষীবাহিনী হোয়াইট গার্ডে যোগ দেন তিনি। সেখানে নানা শুটিং স্পোর্টসে স্নাইপার হিসেবে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়ে তিনি তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। আর স্নাইপার হায়েহার এ দক্ষতাই ঘুম হারাম করে দিয়েছিলো হাজার হাজার সোভিয়েত সেনার। ‘হোয়াইট ডেথ’ নামে সোভিয়েত বাহিনীতে ত্রাস সৃষ্টি করা সিমো হায়েহার অসাধারণ বীরত্ব আর চমৎকার রণকৌশলের গল্প শোনাতেই আজকের এ লেখা।

সিমো হায়েহা

১৯৩৯ সালের কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পর প্রায় মাস তিনেক সময় চলে গেছে। এমন সময় লেনিনগ্রাদের নিরাপত্তার অজুহাত তুলে সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ফিনল্যান্ডকে জানানো হয় যে, তারা যেন দেশ দুটির সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে বিনিময় করে নেয়। কারণ লেনিনগ্রাদ থেকে ফিনল্যান্ডের সীমান্তের দূরত্ব ছিলো মাত্র ৩২ কিলোমিটার। ফিনল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হলে ৩০ নভেম্বর দেশটিতে হামলা চালায় সোভিয়েত ইউনিয়ন।
উভয় পক্ষের শক্তির মাঝে ছিলো আকাশ-পাতাল ব্যবধান। সোভিয়েত ইউনিয়নের ছিলো প্রায় ৯,৯৮,১০০ জন সৈন্য; ১,৫০০ এর অধিক সাঁজোয়া যান, ২,৫১৪-৬,৫৪১টি ট্যাঙ্ক এবং ৩,৮৮০টি যুদ্ধবিমান। অপরদিকে ফিনল্যান্ডের ছিলো মাত্র ২,৫০,০০০-৩,৪০,০০০ সৈন্য, ৩২টি ট্যাঙ্ক ও ১১৪টি যুদ্ধ বিমান। তবে প্রায় ৩০,০০০ এর মতো উচ্চ পদের অফিসারের মৃত্যুদন্ড ও বন্দীত্বের ফলে ১৯৩৯ সালে রেড আর্মি যখন ফিনল্যান্ডে আক্রমণ চালায়, তখন তাদের বাহিনীতে অনভিজ্ঞ সিনিয়র ও মিড-লেভেল অফিসারের সংখ্যাই ছিলো বেশি। তাই সংখ্যায় কম হলেও ‘উইন্টার ওয়্যার’ নামে পরিচিতি পাওয়া এ যুদ্ধে স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ফিনল্যান্ডের সেনারা যে অসামান্য বীরত্ব প্রদর্শন করেছিলো তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য সোভিয়েত শক্তি-সামর্থ্যের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছিলো ফিনল্যান্ড। তবে এ যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছিলো সোভিয়েতদেরই। আর এটি আন্তর্জাতিক মহলে তাদের সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছিলো অনেকখানি। একটি পরিসংখ্যান দিলেই বোঝা যাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। এ যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ১,২৬,৮৭৫-১,৬৭,৯৭৬ জন সেনা নিহত বা নিখোঁজ হয়, ১,৮৮,৬৭১ জন আহত হয়, ৫,৫৭২ জন সেনা বন্দী হয়, ৩,৫৪৩টি ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয় এবং ২৬১-৫১৫টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়। অন্যদিকে ফিনল্যান্ডের ২৫,৯০৪ জন সেনা নিহত বা নিখোঁজ হয়, ৪৩,৫৫৭ জন সেনা আহত হয়, ৮০০-১,১০০ জন বন্দী হয়, ৯৫৭ জন সাধারণ মানুষ বিমান হামলায় মারা যায়, ২০-৩০টি ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয় এবং ৬২টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত ফিনল্যান্ডকে মাথা নোয়াতে বাধ্য করলেও ক্ষতির পাল্লাটা সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকেই বেশি ঝুঁকে ছিলো। ১৯৪০ সালের ১৩ মার্চ মস্কো শান্তি চুক্তির মাধ্যমে এ যুদ্ধের অবসান ঘটে।
ব্যাটেল অব কল্লার মানচিত্র
উইন্টার ওয়্যারেরই একটি অংশ ছিলো ‘ব্যাটেল অব কল্লা (Battle of Kollaa)’ যা ১৯৩৯ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে শেষ দিন পর্যন্ত চলেছিলো। এখানেই ফিনিশ আর্মির ষষ্ঠ কোম্পানির স্নাইপার হিসেবে লড়েছিলেন সিমো হায়েহা। যুদ্ধকালে সেখানকার পরিবেশ ছিলো একেবারেই প্রতিকূলে, -৪০ ডিগ্রি থেকে -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝে ঘোরাঘুরি করছিলো তাপমাত্রা। এমন বৈরি পরিবেশেও সাদা ক্যামোফ্লেজের আশ্রয় নিয়ে শত্রুদের কাছে সাক্ষাৎ যমদূত হয়ে ওঠায় ‘হোয়াইট ডেথ’ নামটি নিজের করে নিয়েছিলেন সিমো হায়েহা। আর বলবেই না কেন? হায়েহা এ যুদ্ধে স্নাইপার হিসেবে ছিলেন ১০০ দিনেরও কম সময় ধরে। এ সময়েই তার নির্ভুল নিশানায় ৫০৫ জন সোভিয়েত সেনা প্রাণ হারায়! অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ৫ জন সেনা হায়েহার হাতে প্রাণ হারাচ্ছিলো। চারদিকের তুষার ঢাকা পরিবেশেও সোভিয়েত বাহিনী সাদা ক্যামোফ্লেজের আশ্রয় না নেয়ায় ব্যাপারটি আরো সহজ হয়ে গিয়েছিলো হায়েহার মতো স্নাইপারদের জন্য। ১৯৯৮ সালে একবার হায়েহাকে তার এমন নিখুঁত নিশানার পেছনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন- “চর্চা”। আবার যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো এতজন সৈন্যকে মারার জন্য তিনি অনুতপ্ত কিনা, তখন তিনি বলেছিলেন, “আমি কেবল আমার দায়িত্ব পালন করেছিলাম এবং যতটা সম্ভব ভালো করে আমি সেটাই করছিলাম যা আমাকে করতে বলা হয়েছিলো।”
যুদ্ধকালে হায়েহা ইম্পেরিয়াল রাশিয়ান আর্মির তৈরি মোসিন-নাগান্ট রাইফেলের ফিনিশ হোয়াট গার্ড মিলিশিয়া সংস্করণটি ব্যবহার করেছিলেন। এর সিরিয়াল নাম্বার ছিলো ৬০৯৭৪। শত্রুর কাছে নিজের অস্তিত্বকে যথাসম্ভব কম জানান দিতে টেলিস্কোপিক সাইটের তুলনায় আয়রন সাইটকেই বেশি প্রাধান্য দিতেন হায়েহা। কারণ টেলিস্কোপিক সাইট ব্যবহার করলে একজন স্নাইপারকে মাথা তুলনামূলক উঁচুতে তুলতে হয়। টেলিস্কোপিক সাইটের গ্লাস ঠান্ডা আবহাওয়ায় সহজেই কুয়াশার কারণে ঝাপসা হয়ে যায়। আবার এর গ্লাসে সূর্যের আলোর ঝলকানি সহজেই দিনের বেলায় একজন স্নাইপারের লুকোবার স্থান শত্রুপক্ষের কাছে প্রকাশ করে দিতে পারে। এসব কারণে আয়রন সাইটই ছিলো হায়েহার পছন্দনীয়। সাদা ক্যামোফ্লেজ গায়ে জড়িয়ে, অসীম সাহস বুকে নিয়ে তাই মাত্র এক দিনের খাদ্য ও গোলাবারুদ নিয়ে চলে যেতেন তিনি। নিজের সামনে একগাদা তুষারের স্তুপ জড়ো করে শত্রুর দৃষ্টিসীমা থেকে নিজেকে আড়ালে রাখতেন হায়েহা। এমনকি সোভিয়েত সেনারা যাতে এমন ঠান্ডা আবহাওয়ায় তার শ্বাস-প্রশ্বাসের ফলে মুখ থেকে বের হওয়া ধোঁয়াও দেখতে না পায়, সেজন্য মাঝে মাঝে মুখে বরফও পুরে রাখতেন তিনি!
আয়রন সাইট ও টেলিস্কোপিক সাইট
হায়েহার কাছ থেকে এমন প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়ে তাকে ঘিরেই নতুন করে পরিকল্পনা সাজাতে বাধ্য হয়েছিলো সোভিয়েত বাহিনী। শুধুমাত্র তাকে শেষ করতে আলাদা স্নাইপারদের কাজে লাগিয়েছিলো তারা, আয়োজন করেছিলো আর্টিলারি স্ট্রাইকের। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয় নি। বরং একবার এক সোভিয়েত সেনা হায়েহার খোঁজে কয়েকজন ফিনিশ সেনা ও তিনজন অফিসারকে মেরে ফেললে ঠান্ডা মাথায় তার টেলিস্কোপিক সাইটে সূর্যের আলোর ঝলকানি দেখে ৪৫০ মিটার দূরে থেকে তাকে শেষ করে দেন হায়েহা।
অবশেষে এলো হায়েহার জীবনের সেই অন্ধকারতম অধ্যায়, ১৯৪০ সালের ৬ মার্চ। অন্যান্য দিনগুলোর মতো সেদিনও নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ করে এক সোভিয়েত সেনার এক্সপ্লোসিভ বুলেট আঘাত হানে তার বাম চোয়ালের নিম্নাংশে। এ আঘাতের পরেও মারা যান নি তিনি, শুধু বাম গালের নিচের দিকের কিছুটা অংশ হারাতে হয় তাকে। সহযোদ্ধারা হায়েহাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এক সপ্তাহ পর, যেদিন মস্কো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো, সেদিনই জ্ঞান ফিরে পান তিনি। যুদ্ধক্ষেত্রে অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরুপ যুদ্ধের পরপরই তাকে কর্পোরাল থেকে সেকেন্ড লেফটেনেন্টে পদোন্নতি দেয়া হয়।
জীবনের শেষ দিনগুলোতে সিমো হায়েহা রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দক্ষিণ ফিনল্যান্ডের ছোট্ট শহর রুওকোলাহ্‌তিতে থাকতেন। ২০০২ সালে যুদ্ধপ্রবীণদের এক নার্সিং হোমে ৯৬ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তীতুল্য এ স্নাইপার।
সিমো হায়েহার সমাধিস্তম্ভ

Sunday, March 5, 2017

ক্যাম্প – ২২: পৃথিবীর এক নরকের গল্প

By On 5:45:00 PM

ক্যাম্প – ২২, পৃথিবীতে বিদ্যমান এক নরক, যেখানে কেউ একবার প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না। যেখানে মানুষকে মানুষের চোখে দেখা হতো না, যেখানে মানুষকে ব্যবহার করে ভয়াবহ সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হতো, যেখানে প্রসূতি নারীদের সরাসরি পেট কেটে ভ্রূণ বের করে ফেলা হতো, কখনো বা বড় তক্তা দিয়ে পিষে পিষে গর্ভপাত করানো হতো ৮-৯ মাসে প্রসূতিকে! যেখানে অভুক্ত শিশুরা এক কণা খাদ্যের জন্য প্রহরীর লাথি খেয়ে পচা ডোবায় পড়ে মরে, যেখানে নারীদের নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে মেরে ফেলে হতো।

স্যাটেলাইটে তোলা ছবি – ক্যাম্প ২২

উত্তর কোরিয়ার Haengyong Concentration Camp-কে ক্যাম্প ২২ বলা হয়। এখানে সেসব মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয় যারা রাজনৈতিক সমালোচনা বা রাজনৈতিক ‘অপরাধী। আরো ভালোভাবে বলতে গেলে উত্তর কোরিয়ার Great Leader-দের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা বা রাষ্ট্রদ্রোহিতা করলেই অপরাধী নিজে তো জেলখানায় যাবেই, তার সাথে সাথে তার ৩ প্রজন্মকেও জেলখানায় পচতে হতো, এমনকি জেলখানায় জন্মানো শিশুটিও নিস্তার পেত না!
উত্তর কোরিয়ার উত্তর পূর্ব সীমান্তে হোয়ের ইয়ং কাউন্টিতে ২২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই নরকের অবস্থান। চারদিকে পাহাড়ে ঘেরা এই ক্যাম্প ১০ ফুট চওড়া ৩,৩০০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক বেড়া দিয়ে আবৃত। কঠোর নিরাপত্তা এবং ক্যাম্প পরিচালনার জন্য প্রায় ১,০০০ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এবং প্রশিক্ষিত কুকুরসমেত পাহারাদার এবং ৫০০৬০০ কর্মকর্তা রয়েছে। কিছু দূর পর পর ল্যান্ড মাইন এবং মানুষ মারার গোপন ফাঁদ রয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার নারী পুরুষ ও শিশুবন্দী ছিল বলে জানা যায়। এরকম ভয়াবহ নরক উত্তর কোরিয়ায় আরো রয়েছে। এসব ক্যাম্পের বন্দীদের দিয়ে চাষবাস থেকে শুরু করে কারখানার কাজও করানো হয়। উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতির একটা বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে এই ক্যাম্পগুলোর শিল্পোৎপাদন।

পাঠকের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে- এত কঠোর নিরাপত্তার পরও বহির্বিশ্বের মানুষ কীভাবে এই ক্যাম্পগুলোর অস্তিত্ব এবং এর কর্মকাণ্ড কীভাবে জানতে পেরেছে? চলুন জেনে নেই সেই সব মানুষের কাছ থেকে যারা এক সময় এই ক্যাম্পে কর্মী হিসেবে ছিলেন এবং কেউবা পালিয়ে এসেছেন সেই নরক থেকে।
উত্তর কোরিয়ার স্বৈরশাসক Kim Il Sung এবং Kim Jong Il তাদের বিরোধীদের দমনের জন্য এই ক্যাম্প তৈরি করেছেন। বহির্বিশ্ব এবং দেশের মানুষের অগোচরে নিরিবিলি সব জায়গায় তৈরি করেছেন এসব জেলখানা যেখানে হতভাগা অপরাধীকে পরিবার এবং বংশসহ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বর্বরতার নজির খুব কম। কিন্তু সেই কঠোর নিরাপত্তাকে খুব সহজেই ভেদ করেছে স্যাটেলাইট। চলুন দেখে নেই স্যাটেলাইটের তোলা কিছু ছবি।
স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি- ক্যাম্প ২২
ডেভিড হক নামক এক মানবাধিকার গবেষক ক্যাম্প ২২ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেন। তিনি ক্যাম্পের কিছু প্রাক্তন পাহারাদার এবং পালিয়ে আসা বন্দিদের কাছ থেকে বেশ কিছু সাক্ষাৎকার নেন। ম্যাং চল নামক এক প্রহরী গুগল আর্থের তোলা ছবিগুলো দেখে প্রত্যেকটি ভবন এবং সেসব ভবনের কাজ কর্ম থেকে শুরু করে কী ধরণের নির্যাতন করা হতো সব কিছুর বর্ণনা দেন।
ডিটেনশন সেন্টার দেখিয়ে বলেনকেউ যদি একবার এখানে ঢোকে, তবে তিন মাসের মাঝে মারা যাবেই। আর না মারা গেলেও সারা জীবনের জন্য অথর্ব হয়ে যাবে।” কাজে গাফলতি কিংবা সারাদিনের বরাদ্দ কাজ যদি কোনো বন্দী শেষ করতে না পারে, তবে প্রথমবারের জন্য তার খাবার বন্ধ করে দেয়া হয়। একই কাজ যদি সে তৃতীয়বার করে, তবে তাকে সরাসরি ডিটেনশন সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আর ডিটেনশন সেন্টার মানেই সাক্ষাত মৃত্যু।
কিম ২ সাং ইন্সটিটিউট দেখিয়ে তিনি বলেনএটা অফিসারদের সিনেমা হল এবং পাশেই গার্ড ট্রেনিং সেন্টার।” একটি ময়লা ফেলার পচা ডোবা দেখিয়ে বলেনএই পচা পুকুরে ২টি শিশুর মৃত্যু হয় গার্ডের লাথিতে কারণ তারা ছোট্ট এক টুকরা নুডুলস নিয়ে কাড়াকাড়ি করছিলো।
এভাবে ডোবায় ফেলে গণ কবর দিতো
এখানে গার্ডদের ট্রেনিং এর সময় বলা হতোক্যাম্পের বন্দীরা মানুষ নয়তাদের সাথে কুকুর বিড়ালের মতো আচরণ করতে হবে। আর গার্ড চাইলেই যেকোনো বন্দীকে যখন খুশি মেরে ফেলতে পারবে। এ ব্যাপারে কোনো জবাবদিহি করতে হবে না। কখনো কখনো এমন হয়েছে, কোন বন্দীকে তলবের পর তার আসতে খানিক দেরি হয়েছে বা দুর্বলতার ধীর পায়ে হেঁটে এসেছেএই অপরাধের জন্য গার্ড সেই বন্দীকে মেরে ফেলেছে।
ক্যাম্পের বন্দীদের কাছে মৃত্যু খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। কারণ প্রতিদিন কেউ না কেউ চোখের সামনে মারা যায়। তবে মৃতদের মাঝে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। হতভাগা শিশুদের বাবা মাও জানতে পারে না কখন কোথায় তাদের আদরের সন্তানটি মারা গেছে। সেখানে মরাকান্নাও নিষিদ্ধ। ম্যাং চলের ভাষ্যমতেপ্রতি বছর প্রায় ২,০০০ এর অধিক বন্দী মারা যায়। কখনো গার্ডের হাতেকখনোবা অতি পুষ্টিহীনতায় কিংবা নির্যাতনের কারণে।
গার্ডদের কুকুরের মহাভোজন
ক্যাম্পগুলোতে বন্দীদের অমানবিক পরিশ্রম করানো হতো। চাষের ক্ষেত থেকে শুরু করে খনি এবং ফ্যাক্টরিগুলোতে সপ্তাহে ৭ দিন দৈনিক ১৫ ঘন্টা কাজ করতে হতো। গ্রীষ্মে সকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। ছুটির দিন বলতে বছরের প্রথম দিন। অবশ্য ২০০৩ সালের পর কিম জন উনের জন্মদিন উপলক্ষে ক্যাম্পগুলোতে ৪ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এতটাই ‘মহান’ নেতা কিম!
এক রুমে ১০০ জন করে বন্দী থাকতো। সবাই গণ টয়লেট যা কখনোই পরিষ্কার করা হতো না। বড় কাজ শেষে তারা শুকনো পাতা দিয়ে পরিষ্কার হত। যেসব বন্দীরা ভালোভাবে কাজ করে, তারা মাঝে মাঝে পরিবারের সাথে থাকার সুযোগ পেত। থাকার জন্য ছোট্ট রুম বরাদ্দ থাকে, যাকে রুম না বলে খুপরি বলা চলে।
ভয়াবহতম দৃশ্যঃ বাধ্য হয়ে নিজের পিতাকে, স্বামীকে হত্যা করা
আর খাবারদাবার বলতে দিনে ২ বার ১৮০ গ্রাম পরিমাণ ভুট্টা দেয়া হতো। কোনো ধরণের সবজি কিংবা মাংসের ছোঁয়া পেত না বন্দীদের জিহ্বা। বন্দীরা অবশ্য হাতের কাছে যা পেত তারই মাংস খেতো, যেমন ইঁদুর, সাপ এবং ব্যাং যখন যা খুঁজে পেত। তবে প্রহরীদের চোখে পড়লে বেশ বিপদে পড়তে হতো বেচারাদের। তাই কখনো কখনো ইঁদুরের পচা মাংস কিংবা চামড়া না ছাড়িয়েই খেতো যাতে প্রহরীরা দেখতে না পায়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা। ১০ বছর বয়স হওয়ার আগেই অনেক শিশু পুষ্টিহীনতায় মারা যায়।
ম্যাং চল যখন প্রহরী হিসেবে ক্যাম্পে আসেন, তখন তিনি দেখতে পান জীবন্ত সব কঙ্কাল ঘুরে বেড়াচ্ছে। কারো অক্ষিকোটরে একটি চোখ নেই, তো কারো সারা শরীর আগুনে পুড়ে গেছে, কারো বা ২টি পা নেই কিংবা কোনো না কোনো অঙ্গ বিকৃত কিংবা কারো হাতের হাড় ভেঙ্গে বের হয়ে এসেছে। কারো আবার গালে এক পাটি দাঁত নেই। বন্দীদের দশা এতটাই করুণ!
তিনি বলেন ৩০ ভাগেরও বেশি বন্দী শারিরিকভাবে কাজে অক্ষম। কারণ তাদের এমন নির্যাতন করা হয় যে তিন মাসের মাঝেই মৃত্যু নিশ্চিত। নতুন নতুন বন্দীদের জায়গা দিতে হয় বলে মানুষকে পিঁপড়ার মতো করে পিষে মেরে ফেলা হয়। কখনোবা বন্দীদের থাকার যায়গায় ইচ্ছাকৃত আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। শত শত বন্দী নির্বিচারে মারা যায়, কেউবা ঝলসানো শরীর নিয়ে দিনের পর দিন কাজ করে যায়।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করতে হতো বন্দীদের
বন্দীদের মৃতদেহের সৎকার তো দূরেই থাক বরং যে বর্বরতার সহিত সেই লাশগুলোর একটা ‘গতি’ করা হয় তা শুনলে আপনার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাবে। চংজিন পাওয়ার প্ল্যান্ট, চংজিন স্টিল মিল এবং কিমচেক স্টিল মিলের কয়লার সাপ্লাই দেয়া হয় ক্যাম্প ২২ থেকে। পাঠক কি কিছু আন্দাজ করতে পারছেন কি হয় সেই হতভাগা বন্দীদের লাশের? অধিকাংশ লাশ ট্রাকে করে পাঠানো হতো কয়লা বানানোর জন্য। কয়লার মিশিয়ে লাশগুলোকে বড় বড় চুল্লিতে পুড়িয়ে কয়লা বানানো হতো। আর যে ছাই পাওয়া যেত তা জমিতে ব্যবহার করা হতো উর্বরতার জন্য।
তিনি আরো বলেন- ক্যাম্পে সয়া সস, বিস্কুট এবং বিনপেস্টের একটি কারখানা রয়েছে যেখানে শুধুমাত্র ২০-৩০ বছর বয়সী সুন্দরী নারীরা কাজ করে। আর তাদের পরনে থাকে পাতলা সাদা কাপড়। কর্তব্যরত অফিসার এবং গার্ডরা তাদের যখন ইচ্ছা ধর্ষণ করে। যদি কোনো নারী বাধা প্রদান করে, তাকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয় কিংবা গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। এমনকি কিছু কিছু ক্যাম্পে নিয়ম করে নারীদের ধর্ষণ করা হয়।
জোরপূর্বক গর্ভপাতের একটি দৃশ্য
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপারটি ঘটে নারীরা যখন গর্ভবতী হতো। ক্যাম্পে নারী বন্দীদের গর্ভবতী হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ এতে ক্যাম্পের জনসংখা বৃদ্ধি পাবে। কোনো নারী যদি সন্তান প্রসব করেও ফেলে তবে সদ্যজাত শিশুটিকে দেয়ালে আছড়ে মারা হয় কিংবা মাকে বাধ্য করা হয় নিজের সন্তানকে হত্যা করতে। গর্ভবতী নারীদের জোরপূর্বক পেট কেটে গর্ভপাত করানো হতো।
ভারি পাথর নিয়ে দৌড়াতে হতো প্রসূতি মায়েদের
কখনো বা ভারিপাথর হাতে নিয়ে দৌড় দিতে বলা হতো কিংবা গর্ভবতীর পেটের উপর বড় তক্তা বসিয়ে ২ পাশ থেকে ২ জন চাপ দিত। গর্ভপাতের বিষয়টি এতটাই ভয়াবহ যে অনেকসময় বন্দিনী মারাও যেত।
নির্মমভাবে লাথি দিয়ে গর্ভপাত করা হতো
কোনো নারী বন্দী যেন দ্বিতীয়বার গর্ভ ধারণ না করতে পারে তাই আগুন দিয়ে যোনী জ্বালিয়ে দেয়া হতো
সদ্য জন্মানো শিশুকে কুকুর দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে।
এবার আসা যাক ক্যাম্পের অফিশিয়াল নির্যাতনের প্রসঙ্গে।
বন্দীরা না পারতো বসতে, না পারতো দাঁড়াতে
বন্দীরা সবচেয়ে বেশি ভয় পায় এই নির্যাতন প্রক্রিয়াকে। বন্দীদের হাত মোটামুটি ৬০ সেন্টিমিটার উপরে একটি গরম পানির পাইপের সাথে বাঁধা হয়। এ অবস্থায় না পারা যায় বসতে, না পারা যায় দাঁড়াতে। তখন গার্ড ইচ্ছামত মোটা মুগুর সদৃশ লাঠি দিয়ে পিটায়, লাথি দেয় কিংবা ঘুষি মারে। এভাবে টানা কয়েকদিন চলতে থাকলে এক সময় শরীর প্যারালাইজড হয়ে যায় এবং বুকের সাথে হাতের সন্ধি খুলে আসে।
Kneeling Torture বলে এক ধরণের নির্যাতনে বন্দীর পায়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং কিছুদিন পর প্যারালাইজড হয়ে বন্দীর মৃত্যু ঘটতে বাধ্য। প্রথমে বন্দীকে হাঁটু গেড়ে বসানো হয়। তারপর হাঁটুর দুই হাড়ের সংযোগস্থলে একটি চ্যালা কাঠ বসিয়ে দেয়া হয় যাতে পায়ে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়।
জোরপূর্বক পানি খাওয়ানোর নির্যাতনে প্রথমে অপরাধীকে একটি টেবিলের উপর শক্ত করে বাঁধা হয় এবং জোরপূর্বক ঠেসে ঠেসে পানি গেলানো হয়। তারপর একটি তক্তা পেটের উপর বিছিয়ে নির্যাতনকারী তার উপর শুয়ে পড়ে। এতে পাকস্থলি থেকে পানি সব বের হয়ে পড়ে।
পানিতে নিমজ্জন বলে আরেক ধরণের শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। বন্দীর মাথা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে পুরে ফেলে পা উলটিয়ে মাথা পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়। দীর্ঘ সময় ধরে এই শাস্তি দেয়া হলে বন্দী মারা যায়।
পানিতে আরেক ধরণের নির্যাতন করা হয়। একটি পানি ভর্তি ট্যাঙ্কিতে বন্দীকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ট্যাঙ্কে পানির উচ্চতা থাকে বন্দীর নাকের উচ্চতার খানিক বেশি। তাই বন্দীকে সর্বদাই পায়ের আঙ্গুলের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, এসময় হাত পেছন থেকে বাঁধা থাকে।
মাঝে মাঝে অফিসারগণ তাদের মনের সুখ মেটাতে উল্টো করে ঝুলিয়ে মুগুর সদৃশ লাঠি দিয়ে এমন বর্বরতার সহিত বন্দীকে প্রহার করে যে হাড় ভেঙ্গে শরীর থেকে বের হয়ে চলে আসতো। বিষয়টা আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতো যখন অফিসারের মেজাজ চরমে থাকতো।
জ্ঞান বিজ্ঞানের নানা পরীক্ষা নিরীক্ষায় এই বন্দীদের ব্যবহার করা হতো। গ্যাস চেম্বারে বিভিন্ন গ্যাসের পরীক্ষা নিরীক্ষায় এবং নতুন কোনো ঔষধের পরীক্ষা করতে এদের ব্যবহার করা হতো। সবচেয়ে পৈশাচিক ব্যাপার হলো- অস্ত্রোপচারের সময় কোনো চেতনানাশক বা অ্যানেস্থেশিয়া ব্যবহার করা হতো না। হাতভাগা বন্দীদের আর্তচিৎকার পরীক্ষারত ডাক্তার ও বিজ্ঞানীদের পাশবিক আনন্দ দিত।
Kwon Hyok নামক এক নিরাপত্তা প্রধান বলেন- একবার তাকে বলা হয়েছিল ৩-৪ জন বন্দীকে ধরে নিয়ে আসতে। একটি দম বন্ধ হয়ে আসে এমন গ্যাসের পরীক্ষার জন্য তাদের ব্যবহার করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি একটি পরিবারকে নিয়ে আসেন। একটি কাচের তৈরি চেম্বারে তাদের ঢুকিয়ে গ্যাসটি ছেড়ে দেয়া হল, পুরো পরিবারটি যখন বেঁচে থাকার জন্য প্রচন্ড আকুলিবিকুলি করছিলো, তখন মা এবং বাবা বাচ্চা দুটির গালে মুখ দিয়ে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছিলো, কিন্তু বিধি বাম। পুরো পরিবারটিকেই গ্যাসে অবরুদ্ধ হয়ে মারা যেতে হয়েছিল। এ তো গেল একটি ঘটনা মাত্র। প্রতিনিয়ত ভয়াবহ সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হতো এই হতভাগা মানুষগুলোর উপর।
ক্যাম্প ২২ বর্তমানে বন্ধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ক্যাম্প ২২ বন্ধ হলেও মুক্তি পায়নি তার বন্দীরা। ২০,০০০ বন্দীর মাঝে মোটামুটি ৮,০০০ বন্দীকে ক্যাম্প ২৫ এ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বাকিদের কোনো হদিস নেই। ধারণা করা হয়, ২০০৯ সালের মুদ্রা মুল্যহ্রাসের ফলে ক্যাম্প অথোরিটি পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার কিনতে না পারায় এবং সেই বছর ক্যাম্পের নিজস্ব ফলন অনেক কম হওয়ায় অনেক বন্দী অনাহারে মারা যায়। ২০১২ সালে স্যাটেলাইটে তোলা ছবিতে দেখা যায় গার্ড হাউজগুলো ভেঙ্গে গেছে, কিছু স্থাপনা ভেঙ্গে যাবার পথে।

Saturday, March 4, 2017

বিভিন্ন দেশের আজব যত আইন

By On 6:01:00 PM

ধরুন, আপনি চুইংগাম চিবুচ্ছেন। এমন সময় আপনার সামনে এসে উপস্থিত হলেন পুলিশ প্রশাসনের কেউ। বলা নেই, কওয়া নেই, অমনি আপনার শার্টের কলার ধরে সোজা পুরে দিলো আপনাকে একদম হাজতে। কী? অবাক হচ্ছেন তো? ভাবছেন কোনো পাগলের প্রলাপ শুরু হলো কিনা? মোটেও তা কিন্তু না। আমি সত্যি বলছি, এমনটা হতেই পারে, যদি আপনি থাকেন সিঙ্গাপুরে।
আমাদের দেশে প্রায়ই এমন কিছু বিরক্তিকর ঘটনা ঘটে, যেগুলো এখন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন: আপনার শরীরে কেউ ছাদ থেকে পানি ফেলে দিল বা বাসে বসে থুথু ফেললো আর পড়লো আপনার গায়ে। এসবের জন্যে কিন্তু আমাদের দেশে কোনো আইন হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
কিন্তু পৃথিবীতে এমনও দেশ আছে যাদের রয়েছে এসবের জন্যে কড়া সব নিয়ম কানুন। তারা এসবের জন্য আদালতেও যেতে পারে। ক্ষতিপূরণের মামলা করে দিতে পারে। কারণ তাদের দেশে বড় বড় অপরাধ যেমন, খুন কিংবা মারামারির মতো ঘটনা কম থাকার ফলে মামলার সংখ্যা খুবই কম। তাই এমন ছোট ছোট মামলা নিয়ে তারা মহাব্যস্ত থাকে।
আমরা প্রায়শই আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের নিয়মকানুন নিয়ে রাগ-ক্ষোভ প্রকাশ করে থাকি। অনেকে আবার হাপিত্যেশ করি, “ইশ! যদি এমনটা হতো, তেমনটা হতো, খুব ভালো হতো, খুব উচিত হতো।” কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন সব উদ্ভট আইন-কানুন আছে, যা জানার পর আপনি নিজ থেকে অন্তত একবার হলেও বলবেন- “যাক বাবা! বড্ড বাঁচা বেঁচে গেলাম।” সেসব অদ্ভুত আইন থেকে আমরা সত্যিই মুক্ত। শুধু অদ্ভুত বললে কম বলাই হবে, এতসব বিচিত্র আইন বিনোদনদায়কও বটে।

চোখ মারা আইন

আপনি যদি ভুল বশতও কোনো নারীকে চোখ মেরে থাকেন, তবে প্রস্তুত হোন আইনের নজরে আসতে। ওটুমওয়া, আইওয়াতে (Ottumwa, Iowa) আপনি যদি আইন না জেনেও এ কাজ করে থাকেন, তবে তার জন্যে আপনার জরিমানা সুলভ ট্যাঁকের কড়ি খোয়াতেই হবে।
এমন কিছু করলেই পড়বেন আইনের প্যাঁচে, ছবিসূত্র: Mo Riza flickr

ছোট্ট সোনামণির ঘরের কাজেও আইন!

দেখেছেন কি কখনও? আপনার ছোট্ট বাবুটা মায়ের পাশে পাশে ঘুরে মাকে কাজে সাহায্য করছে। এমনটা যে শুধু মা বলেছেন বলেই নয় কিন্তু! রীতিমতো আইন তৈরি করে বাধ্যবাধকতা গড়ে দেওয়া হয়েছে বলেই শিশুরা মাকে ঘরের কাজে সহায়তা করতে বাধ্য। খুব বেশি বাড়াবাড়ি মনে হলেও ঘরের কাজে সাহায্য করতে এবং মা-বাবাকে শ্রদ্ধা করতে শিশুদের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এটা হয়তো স্পেনেই সম্ভব।
এ খবরে অনেকেই হয়তো বিস্মিত হবেন। কিন্তু এ আইনের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এতে ছেলে বা মেয়ে শিশু উভয়কেই ঘরের কাজে পিতা-মাতাকে সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে। স্পেনে পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে এমন অনেক আইন আছে। একটা আইন করেই দেশটির সব স্বামীদের ঘরের কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করা এবং সন্তান লালন-পালনে সময় দেওয়ার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। কোনো স্বামী তা না করলে স্ত্রী অভিযোগের পসরা সাজিয়ে আদালতে পেশ করতেই পারেন। তখন আদালতের নিয়মানুযায়ী স্বামীর সাজা নির্ধারিত হবে। কি? যাবেন নাকি, স্পেনে?
ঘরের কাজে মাকে সাহায্যরত শিশু

চুইংগামের উপর কড়া নিয়ম

এ কথা অনস্বীকার্য যে, সিঙ্গাপুর অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে এর তুলনাই নেই। এত সব সৌন্দর্যের  ডালি তো আর একদিনে সম্ভব হয়ে উঠেনি! এর পেছনেই রয়েছে কড়া প্রশাসনিক আইন।
সিঙ্গাপুর’স ফ্লাইয়ার ও স্যান্ডস স্কাইপার্ক, ছবিসূত্র: Ian Delgado
সিঙ্গাপুরে কেউ যদি যত্রতত্র চুইংগাম ফেলে, তবে তার জন্যে ১ হাজার ডলার জরিমানা গুণতে হবে। দ্বিতীয়বার যদি একই অপরাধ কেউ করে থাকেন, তবে তার জরিমানা ২ হাজার ডলার। সাথে শাস্তিস্বরূপ একদিনের জন্য পাবলিক প্লেস পরিষ্কার করতে তাকে বাধ্য করার নিয়ম জারি আছে। তারপরেও কেউ যদি তৃতীয়বার চুইংগাম ফেলে রাস্তা নষ্ট করার মতো দুঃসাহস দেখাতে যায়, তবে তাকে বিব পরে রাস্তা পরিষ্কার করতেই হবে যাতে লিখা থাকবে ‘I’m a litterer’।
এমনকি ফার্মেসীগুলোতে যদি বিক্রয় অনুমোদন ছাড়া অথবা ভুলবশত সেলার আইডি ব্যবহার না করে কেউ মেডিকেল চুইংগাম বিক্রি করে বসেন, তবে তাকে ২ বছরের জন্যে জেলখানার ঘানি টেনে তবেই তার মুক্তি। যত্রতত্র থুথু ফেলাও সিঙ্গাপুরে অন্যায়ের পর্যায়ে পড়ে।
চুইংগাম নির্দেশক শোয়িং ফাইন বোর্ড, সিঙ্গাপুর

কুমারী মেয়েদের উপর বিষয়ক জারিকৃত আইন

আমেরিকার গুয়ামে কোনো কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারবে না, এমন আইন রয়েছে! তবে এর প্রতিকারমূলক পদ্ধতি হলো অঙ্গরাজ্যটিতে কিছু পুরুষ আছে যারা অর্থের বিনিময়ে কুমারীত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয় এবং তাদের দেয়া সনদ মোতাবেক বিবাহ সম্পন্ন হয়! মেয়ের বাবা-মা সাধারণত এই কাজের জন্য অনেক টাকা-পয়সা খরচ করেন।
আবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে এমন আইনও আছে যে, কুমারী মেয়েদের সঙ্গে সহবাস নিষিদ্ধ। এমনকি বিয়ের পর বাসর রাতেও স্বামী তার কুমারী বধূর সঙ্গে সহবাস করতে পারবেন না। তবে কুমারী মেয়ে কীভাবে তার কুমারীত্ব বিসর্জন দেবে, এ বিষয়ে কোনো আইনি ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। যেমনটি দেয়া হয়েছে গুয়ামের কুমারী মেয়েদের বেলায়।
এ তো গেল বিবাহ সম্পর্কিত রীতি-নীতি। এবার আসি ডেটিং নিয়ে নিয়মের বেড়াজালে। জাপানে কোনো মেয়েকে কোনো ছেলে ডেটিংয়ে যেতে বললে বা কোনো প্রণয় প্রস্তাব দিলে মেয়েটি আইন অনুসারে ‘না’ করতে পারবে না। আবার জাপানেই কারো বড় ভাই তার গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করে ছোট ভাইকে সম্মানিত করতে চাইলে আইন অনুসারে গার্লফ্রেন্ড অসম্মতি জানাতে পারবে না।
আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে একটা অদ্ভুত আইন প্রচলিত আছে যে, কোনো পুরুষ নারীর সাথে ভালোবাসার অভিনয় করলে তাকে ২৫ ডলার জরিমানা গুণতে হবে। এ আইনে আরো আছে যে, পুরুষদের শহরের এদিক-সেদিক অযথা ঘোরাঘুরি ও নারীদের সঙ্গে ভালোবাসার ভান করা নিষিদ্ধ।
ভালোবাসার অভিনয় বা ভান করা নিষেধ!

নারী বনাম সম্পত্তি

এবার আসুন নারী কোথায়, কখন সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হয় তা জেনে আসি। থাইল্যান্ডে ৩০ বছরের বেশি বয়সী অবিবাহিত নারী দেশের সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে। জিম-ডেলার গল্পটি আমরা কম বেশি সকলেই জানি। মিশিগানে হয়তোবা সে আদলেই তৈরি হয়েছে এ নিয়ম! কোনো মহিলা স্বামীর অনুমতি ছাড়া মাথার চুল বিক্রি করতে পারবেন না। সেখানে স্ত্রীর চুল স্বামীর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য।

বউ পেটানো আইন

আরাকানসায় মাসে দুইবার বউ পেটালেই দণ্ড। তবে এর নির্মম দিকটি হলো, মাসে একবার কিন্তু বউ পেটানো যাবে! আবার নেভাদায় রয়েছে অন্য নিয়ম। নেভাদায় বৌ পেটানোর সময় ধরা পড়লে তাকে আটঘণ্টা বেঁধে রাখা হবে। সাথে তার বুকে ষ্টিকার লাগিয়ে দেয়া হবে, যেখানে লেখা থাকবে ‘ওয়াইফ বিটার‘ কথাটি।
শুধু বউকে পেটানোর আইনই তৈরি হয়নি, বউয়ের জন্মদিন নিয়েও আইন রয়েছে। সামোয়া দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় একটি নতুন দেশ। সেখানে নিজের স্ত্রীর জন্মদিন ভুলে যাওয়াটাই বে-আইনী।
নির্যাতন!

পরকীয়া আইন

হংকংয়ে এমন আইন প্রচলিত আছে যে, যদি কারো স্ত্রী পরকীয়া করে, তবে স্বামী তাকে খুন করতে পারে। তবে শর্ত একটাই, খুন করতে হবে খালি হাতে। এক্ষেত্রে যে লোকের সাথে পরকীয়া করেছে, তাকে অস্ত্র দিয়ে খুন করা যাবে বৈকি!

জুতা আইন

ইতালির ক্যাপ্রিতে ফ্লিপ-ফ্লপ শু বা স্কুইকি শু পরা নিষেধ। এসব জুতো পরলে নীরবতা স্খলিত হয়। সেকারণেই এমন অদ্ভুত নিয়ম করা হয়েছে।
স্লিপার, ছবিসূত্র: Chris Bartnik, flickr

উচ্চ শব্দ অথবা হুইসেলিং আইন

অন্টারিওতে অবস্থিত পেট্রলিয়া শহরে উচ্চমাত্রার শব্দের উপরেও আইন বলবৎ আছে। কোনো প্রকার হৈ-হুল্লোড়, চিৎকার-চেঁচামেচি, হুইসেলিং, এমনকি উচ্চস্বরে গান গাওয়া পর্যন্ত নিষেধ এখানে।
হুইসেলিং

লাইসেন্স আইন

গাড়ি চালকের চালনা পদ্ধতি যদি ঠিক না থাকে, তবে পুলিশ তার লাইসেন্স বাতিল করতেই পারে। কিন্তু এথেন্সের পুলিশ কোনো গাড়ির চালকের লাইসেন্স বাতিল করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে, যদি ওই চালক গোসল না করে থাকে। বড়ই বিচিত্র নিয়ম!

খাওয়ার ধরন নিয়ে আইন

আমাদের দেশে অনেকেরই স্বভাবজাত প্রবৃত্তি লক্ষ্য করা যায় যে, তরল জাতীয় খাবার, বিশেষ করে চা বা কফি পিরিচে ঢেলে শব্দ করে পান করেন। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার সুসানভিলে সুড়ুৎ সুড়ুৎ করে সুপ খাওয়া একটি অমার্জনীয় অপরাধ পর্যায়ে পড়ে। আছে নাকি আপনার এমন অভ্যাস?

স্বাস্থ্য আইন

জাপান উন্নত দেশ হবার কারণে সে দেশের মানুষের আয়ুষ্কালও বেশি। তাই দেখা যায় জাপানের কর্মদক্ষ জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশই হলো প্রবীণ গোছের। বয়স্ক এই কর্মীবাহিনীকে কর্মক্ষম রাখার অভিপ্রায়ে ২০০৮ সালে আইন করে ৪০ থেকে ৭৫ বছর বয়সীদের কোমরের মাপ ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী জাপানে ‘ওবেসিটি’ বা মুটিয়ে যাওয়াকে স্থানীয়ভাবে ‘মেটাবো’ বলা হয়। আইন জারি হয়, কোনো দপ্তর বা কারখানা যদি তাদের ‘মেটাবো’ কর্মীর সংখ্যা ২৫ ভাগ কমাতে না পারে, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জরিমানাও নির্ধারিত। দেশের বয়স্ক স্বাস্থ্যসেবায় ওই প্রতিষ্ঠানকে সাধারণের তুলনায় বেশি পরিমাণ অর্থ দেওয়ার নিয়ম আছে।
কোমরের মাপ বেশি হওয়া চলবে না
এসব আইন কাগজে কলমে বলবৎ থাকলেও এখন অনেক আইনই কার্যকারিতা হারিয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও এসব নিয়ে আর ভাবে না। তবে বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইনগুলো অদ্ভুত আর মজার বলেই তা মানুষের মনে আনন্দের খোরাক জুগিয়ে চলেছে।

Friday, March 3, 2017

জীবন যাদের কেটেছে বাইশ গজে

By On 7:40:00 PM

দর্শকদের গ্যালারিমুখী করার জন্য বর্তমানে টি-টুয়েন্টি হলো ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংস্করণ। সব দেশই এখন টি-টুয়েন্টি লীগ আয়োজন করার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এতে করে আর্থিক লাভ এবং অধিক দর্শক দুটোই পাওয়া যায়। দর্শকরা এখন মাঠে আসেন ধুমধাড়াক্কা ম্যাচ দেখার জন্য। এতে করে দিন দিন কমে যাচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা।
খুব কম ক্রিকেটারেরই পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ খেলার শারীরিক শক্তি থাকে। বর্তমানে অনেক ক্রিকেটার ইনজুরির ভয়ে টেস্ট ম্যাচ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে নেন এবং সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মনোনিবেশ করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সময়সূচীতেও টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। টেস্ট ম্যাচের চেয়েও টাকার ছড়াছড়ি আছে এমন বিভিন্ন প্রিমিয়ার লীগই এখন বেশি জমজমাট।
পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে বোঝা যাবে বর্তমানের ক্রিকেটাররা লম্বা সময় ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলার ফিটনেস রাখেন না। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬৬ জন ক্রিকেটার শতাধিক টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। এর মধ্যে ক্রিকেটের আধুনিক যুগে অর্থাৎ শেষ ১৭ বছরে মাত্র ১৫ জন ক্রিকেটার শতাধিক টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন।
ক্রিকেট আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার বহু আগে বিভিন্ন দেশে ঘরোয়াভাবে বর্তমান টেস্ট ম্যাচের আদলে ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হত, যাকে প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ বলা হয়। বিশেষ করে ১৮৯৫ সালের পূর্বে অনুষ্ঠিত ম্যাচসমূহকে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সকল প্রতিযোগিতামূলক টেস্ট ম্যাচকে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দেয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)।
আধুনিক ক্রিকেটের পথচলা শুরু হয় কাউন্টি ম্যাচের মাধ্যমে। ১৭১৯ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় দল এবং কেন্ট দলের মধ্যে প্রথম কাউন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। তখনো ক্রিকেট আধুনিক ছিল না, কারণ তখন ক্রিকেটের সে যুগের প্রচলিত নিয়মকানুন অনুযায়ী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হত। আধুনিক নিয়মকানুন অনুযায়ী আন্তঃকাউন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৭৪৪ সালে। তবে ১৮৯০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের প্রচলন ঘটে।
আজকের লেখাটি ক্রিকেটের আদি সংস্করণ প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের মহামানবদের নিয়ে, যারা যুগের পর যুগ নিরলসভাবে কাটিয়ে দিয়েছেন বাইশ গজে। ক্রিকেটই ছিল যাদের ধ্যানজ্ঞান।

উইলফ্রেড রোডস

বর্তমানে ১০০টি টেস্ট ম্যাচ খেলতে ক্রিকেটাররা হিমশিম খেয়ে যান। কিন্তু যদি বলা হয় এককালে একজন ক্রিকেটার হাজারের অধিক প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন, তখন সবাই নড়েচড়ে বসবে। এটাও সম্ভব! একজন ক্রিকেটার একাই হাজারের উপর প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন!
ইংল্যান্ড এবং ইয়র্কশায়ারের সাবেক অলরাউন্ডার উইলফ্রেড রোডস ১৮৯৮ সাল থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে খেলেছেন ১,১১০টি ম্যাচ!
উইলফ্রেড রোডস
তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে বোলার হিসাবে দলে জায়গা পান রোডস। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর নিজের ব্যাটিংয়ের উপরও মনোযোগ দেন তিনি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার ব্যাটিংয়ের প্রতিভা আরো বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসাবে তাকে দেখা যায়।
উইলফ্রেড রোডসের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় ১২ মে, ১৮৯৮ সালে। ঐ ম্যাচে ৬ উইকেট শিকার করেন তিনি। নিজের দ্বিতীয় ম্যাচে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে অভিষেক ঘটে তার। নিজের অভিষেক ম্যাচে ৪৫ রানে ১৩ উইকেট শিকার করেন, এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজের প্রথম মৌসুমে ১৫৪ উইকেট শিকার করে উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতে নেন রোডস।
রোডসের সবচেয়ে সফল মৌসুম কাটে ১৯০০ সাল থেকে ১৯০২ সাল পর্যন্ত। এই তিন মৌসুমে ১৪.০৭ গড়ে ৭২৫ উইকেট শিকার করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। ১৯০৩ সালে রোডস প্রথমবারের মতো এক মৌসুমে ১,০০০ রান এবং ১০০ উইকেট শিকার করেন। নিজেকে পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার হিসাবে ঐ বছরেই প্রমাণ করেন। এরপর বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও নিয়মিত সফলতা পেতে থাকেন তিনি। তার ক্যারিয়ারে রেকর্ডসংখ্যক ১৬ বার এক মৌসুমে একই সাথে এক হাজারের বেশি রান এবং একশোর বেশি উইকেট নেবার কৃতিত্ব রয়েছে।
১৯১০ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় দলে স্যার জ্যাক হবসের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করার সুযোগ পেয়ে যান রোডস। ওপেনার হিসাবে নিজের প্রথম সিরিজে জ্যাক হবসের সাথে প্রথম উইকেট জুটিতে বেশ কয়েকবার বড় জুটি গড়েন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐ সিরিজে ২২৬ রান করেন।
মাঠে রোডস
রোডস ক্রিকেট ইতিহাসে এমন সব কীর্তি গড়ে গেছেন যেগুলো এখন ভাঙা প্রায় অসম্ভব। টানা ৩২ বছরের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন ১,১১০টি ম্যাচ, যা এখন সবার কাছে কল্পনাতীত। প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ৪,২০৪টি উইকেট শিকার করেছেন, যা অবধারিতভাবেই বিশ্বরেকর্ড। গোটা ক্যারিয়ার জুড়ে তিনি ২৮৭ বার ইনিংসে ৫ উইকেট এবং ৬৮ বার ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার করেছেন।
ব্যাট হাতেও সমান সফল রোডস। ৫৮টি শতক এবং ১৯৭টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৯,৯৬৯ রান করেছেন প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ারে।ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে ৫৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ২,৩২৫ রান এবং ১২৭ উইকেট শিকার করে অলরাউন্ডারের ভূমিকা পালন করেন তিনি। উইলফ্রেড রোডস যখন ক্রিকেট থেকে অবসর নেন, তখন তার বয়স ছিল ৫২ বছর ১৬৫ দিন। সবচেয়ে বেশি বয়সে টেস্ট খেলা ক্রিকেটারও তিনি।

ফ্রাঙ্ক এডওয়ার্ড ওলি

উইলফ্রেড রোডসের পর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে এমন আরেকজন অলরাউন্ডারের নাম হলো ফ্রাঙ্ক ওলি। ১৮৮৭ সালের ২৭শে মে ইংল্যান্ডের কেন্ট শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
১৯০৬ সালে কেন্টের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় ওলির। কাউন্টি ক্রিকেটের পুরো ক্যারিয়ারে নিজ জন্মশহর কেন্টের হয়ে খেলেছেন তিনি। তিন বছর ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার পর ১৯০৯ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় দলে সুযোগ পান ওলি। রোডসের মতো তার প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ারও ৩২ বছরের। আর এ সময় জুড়ে এমনসব কীর্তি তার আছে যা অক্ষত থাকবে ক্রিকেটের ইতিহাসে।
তাকে নিয়ে লিখতে গেলে বিশেষণগুলো ঠিকমতো দেওয়া যাবে না। চোখের দেখা না দেখে শুধুমাত্র পরিসংখ্যান অনুযায়ীও তিনি ছিলেন অনন্য।
চিরাচরিত ভঙ্গিতে ব্যাটসম্যান ওলি
ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ৬৪ ম্যাচে ৩৬.০৭ ব্যাটিং গড়ে করেছেন ৩,২৮৩ রান। ৫টি শতক এবং ২৩টি অর্ধশতকের সাহায্যে এই রান করেছেন তিনি। বাঁহাতি স্পিন এবং বাঁহাতি পেস দুই ধরনের বলই করতে পারতেন তিনি। আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে তার ঝুলিতে আছে ৮৩টি উইকেট।
প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের তার পরিসংখ্যান আরো বেশি ঈর্ষণীয়। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৭৮টি ম্যাচ খেলে স্যার জ্যাক হবসের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৮,৯৫৯ রান করেছেন ওলি। এই ক্যারিয়ার জুড়ে হাঁকিয়েছেন ১৪৫টি শতক এবং ২৯৫টি অর্ধশতক।
মাঠে নামছেন ওলি (ডানে)
শুধুমাত্র ব্যাট হাতে নয়, বল হাতেও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে দাপট দেখিয়েছেন ৩২ বছর ধরে। ১৯.৮৭ গড়ে শিকার করেছেন ২,০৬৬টি উইকেট। ক্রিকেটে দুর্দান্ত সব কীর্তির জন্য ২০০৯ সালে আইসিসি ক্রিকেট হল অফ ফেইমে জায়গা করে নেন ওলি।

উইলিয়াম গেলবার্ট গ্রেস

১৮৪৮ সালের ১৮ জুলাই ব্রিস্টলের পাশের শহর ডুনেডনে পিতৃভূমিতে জন্মগ্রহণ করেন ডব্লিউ জি গ্রেস। আধুনিক ক্রিকেটের রূপকার বলা হয় তাকে, বিশ্বজুড়ে তিনি পরিচিত ডব্লিউ জি নামে। লম্বা দাড়ি আর সুঠাম দেহ ছিল তার, যা দেখে সহজেই তাকে চেনা যেত। ব্যক্তি ডব্লিউ জি গ্রেসের ডাকনাম ছিল বেশ কয়েকটি। দ্য ডক্টর, দ্য চ্যাম্পিয়ন নামেও ডাকা হত তাকে।
তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান নিয়ে অনেক মতানৈক্য ছিল। অধিকাংশ মানুষের ভাষ্যমতে, ১৮৬৫ সালে তার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় এবং ১৯১৪ সাল পর্যন্ত খেলেন।
ডব্লিউ জি গ্রেস
গ্রেস তার ক্যারিয়ারে ২৯টি ভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্ব করেন, যার মধ্যে বেশিরভাগ দলেই অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ক্রিকেট আন্তর্জাতিকভাবে যখন স্বীকৃতি পায়, তখন গ্রেসের বয়স চল্লিশের কোঠায়, হয়তো তার এটা নিয়ে আফসোস ছিল। আর কিছু সময় আগে ক্রিকেট আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তার অসাধারণ প্রতিভার নিদর্শন রেখে যেতে পারতেন।
তবুও তার কীর্তি অম্লান হয়ে থাকবে ইতিহাসে। শুরুটা করেছিলেন ইংল্যান্ড অল স্টার দলের হয়ে সারি’র বিপক্ষে। নিজের প্রথমবারের প্রথম শ্রেণীর শতককে ২২৪ রানের ইনিংসে পরিণত করেন। এরপর এমসিসির হয়ে খেলেন গ্রেস। ১৮৬৯ সালের জুলাই মাসেই করেন ৪টি শতক। তার মধ্যে দুটি শতক করেছিলেন ব্যাটসম্যানদের জন্য মৃত্যুকূপ স্বরূপ এক পিচে।
গ্রেসের কাউন্টি দল গ্লৌচেস্টাশায়ার ১৮৭০ সালে কাউন্টি স্ট্যাটাস পেলে তার কাউন্টি ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। বিশ বছর বয়সী গ্রেসের তখন ওজন ছিল ৯৫ কেজি। তখন থেকেই তিনি লম্বা দাড়ি রাখা শুরু করেন। ধূমপায়ী না হলেও ভালো খাবার এবং মদের প্রতি দুর্বলতা ছিল তার, যার কারণে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে যায়।
স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে গ্রেস
১৮৭৩ সালে গ্রেস প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে মধ্যাহ্ন বিরতির আগে শতক তুলে নেন জেন্টলম্যান অফ সাউথের হয়ে। ঐ একই মৌসুমে তিনি প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে এক হাজারের অধিক রান এবং একশোর বেশি উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন।
পুরো ক্যারিয়ারে মোট ৮ বার এই কীর্তি গড়েন গ্রেট ডব্লিউ জি।
গ্রেস ইংল্যান্ডের হয়ে ২২টি টেস্ট ম্যাচে ৩২.২৯ ব্যাটিং গড়ে ১,০৯৮ রান করেন। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার বোলিংয়ের প্রতিভা দেখাতে পারেননি। হয়তো বয়স আর শরীরের অতিরিক্ত মেদ প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ২২ টেস্টের ক্যারিয়ারে মাত্র ৯টি উইকেট শিকার করেছেন। যেখানে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তার উইকেট ২,৮০৯টি। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে গ্রেস ৮৭০ ম্যাচে ৩৯.৪৫ ব্যাটিং গড়ে ৫৪,২১১ রান করেছেন ১২৪টি শতক এবং ২৫১টি অর্ধশতকের সাহায্যে।
দীর্ঘ দাড়িওয়ালা এই লোকটি ব্যক্তি জীবনে ছিলেন বেশ মজার। একবার এক বোলারের বলে বোল্ড হওয়ার পর বলটি আবার সেই বোলারের কাছে নিক্ষেপ করে বলেছিলেন, “লোকজন পয়সা খরচ করে আমার ব্যাটিং দেখতে এসেছে, তোমার বোলিং নয়।” আরেকবার তো কাঠের ব্যাটের বদলে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাট হাতে ক্রিজে চলে এসেছিলেন!
শুধুমাত্র ক্রিকেট নয়, গ্রেস ক্রিকেট ছাড়া অ্যাথলেটিকস, ফুটবল, গলফেও নিজের অসাধারণ প্রতিভার আলো ছড়িয়েছেন। ৪৪০ মিটার হার্ডলসে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন, ওয়ান্ডারার্স ফুটবল ক্লাবের খেলোয়াড়, ইংল্যান্ডের বোলিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠালগ্নের সদস্য এবং প্রথম আন্তর্জাতিক বোলিং ম্যাচে ইংলিশ অধিনায়ক ছিলেন ক্রিকেটের এই অমর বুড়ো।
প্রায় ৫০ বছরের দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় জুড়ে গ্রেস ব্যস্ত ছিলেন ক্রিকেটের প্রসারে। জীবনের কাছে পরাজয় মেনেই তবে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন ১৯১৫ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা ডব্লিউ জি গ্রেস।

স্যার জ্যাক হবস

এই কিংবদন্তীর পুরো নাম জন বেরি হবস। আধুনিক যুগের শচীন, লারা, পন্টিংদের জন্মের বহু আগে ব্যাটিংয়ের সব ধরনের শট খেলে অনন্য কীর্তি গড়ে গেছেন হবস।
তার প্রথম শ্রেণীর পরিসংখ্যান দেখে যে কেউ চমকে উঠবে। ক্রিকইনফো অনুযায়ী, তার ক্যারিয়ারে রয়েছে ১৯৯টি শতক! কোথাও কোথাও ১৯৭টি শতক লিখে উপরে স্টার (*) চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে। তার মানে, শতকের সংখ্যা ঠিক কতটি সেটা তাদের জানা নেই।
স্যার জ্যাক হবস
ইতিহাসের প্রথম পরিপূর্ণ ব্যাটসম্যান, সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান এবং সেরা ওপেনারদের একজন জ্যাক হবস। তার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের পরিসংখ্যান ঠিক এমন- ৮৩৪টি ম্যাচে ৫০.৭০ ব্যাটিং গড়ে এবং ১৯৯টি শতক এবং ২৭৩টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৬১,৭৬০ রান! আর তার শতকগুলোর অধিকাংশই এসেছে বয়স চল্লিশের কোঠা অতিক্রম করার পর। শতকের ক্ষেত্রে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্যাটসি হেনড্রেন। তার শতকের সংখ্যা ছিলো ১৭০টি।
মাঝখানে যদি বিশ্বযুদ্ধের জন্য ৫ বছর ক্রিকেট থেকে দূরে না থাকতেন কিংবা তার শতক হাঁকানোর পর অন্যদের ব্যাটিং করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছায় উইকেট বিলিয়ে দিয়ে না আসতেন, তাহলে তার পরিসংখ্যান কেমন হত, একবার ভাবুন তো!
আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে ৪৬ বছর বয়সে শতক হাঁকিয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে শতকের রেকর্ডটি আজ পর্যন্ত নিজের দখলে রেখেছেন। ঐ ম্যাচে শুধুমাত্র ১০০ করেই থেমে থাকেননি, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯২৯ সালে ৪৬ বছর ৮২ দিন বয়সে খেলেছিলেন ২৪২ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস।
ব্যাটিংয়ে স্যার হবস
প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে এত এত শতক হাঁকানোর পরেও হবসের প্রথম আন্তর্জাতিক শতক পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১২টি ম্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৮৭ রান করে প্রথম টেস্ট শতকের দেখা পান হবস।
হবস ইংল্যান্ডের হয়ে ৬১টি টেস্ট ম্যাচে ১৫টি শতক এবং ২৮টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৫৬.৯৪ ব্যাটিং গড়ে ৫,৪১০ রান করেছেন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ঝুলিতে ১০৮টি উইকেট থাকলেও টেস্ট ক্রিকেটে শিকার করেছেন মাত্র ১টি উইকেট। নিজের প্রথম টেস্ট শতক পাওয়া ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার ৯ নম্বর ব্যাটসম্যানকে আউট করে টেস্ট উইকেটের স্বাদ গ্রহণ করেন হবস।
জ্যাক হবস অন্য সব ক্রিকেটারের চেয়ে কতটা এগিয়ে আছেন তা বর্তমানকালের সেরা ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকারের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই বুঝা যাবে। শচীন টেন্ডুলকারের প্রথম শ্রেণীর রানসংখ্যা ২২,৩৩৬। যদিও শচীন তার সমান ম্যাচ খেলেননি তাই তুলনাটা ঠিক যুতসই জুতসই হয়ে উঠেনি। কিন্তু ক্রিকেটের ইতিহাসে তার সাথে তুলনা দেওয়ার মতো ব্যাটসম্যান খুম কমই এসেছে।

প্যাটসি হেনড্রেন

ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটের আরেকজন কিংবদন্তী প্যাটসি হেনড্রেন। ১৮৮৯ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের মিডলেসেক্স শহরে জন্মগ্রহণ করেন হেনড্রেন।
১৯০৭ সালে মিডলেসেক্সের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। বিশ্বযুদ্ধের আগে নিজের ব্যাটিং প্রতিভা ততটা মেলে ধরতে পারেননি তিনি। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নিজেকে চেনাতে শুরু করেন হেনড্রেন। ১৯১৯ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটে ১,৬৫৫ রান করেছেন ৬০ এর উপর ব্যাটিং গড়ে। এই কারণেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার প্রথম বছরেই ‘উইজডেন ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার জিতে নেন ১৯২০ সালে।
মাঠে নামছেন হেনড্রেন (ডানে)
মাত্র দুই সিরিজ খেলেই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে যান হেনড্রেন। কিন্তু অগাধ আত্মবিশ্বাস আর টইটম্বুর প্রতিভা থাকার কারণে ১৯২৩ সালে আবারও জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যান তিনি। সেই বছর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৩টি শতকের সাহায্যে ৩,০১০ রান করেছেন। জাতীয় দলে পুনরায় সুযোগ পাওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৩২.৬৬ ব্যাটিং গড়ে রান করেছেন, এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।
১৯২২ সাল থেকে ১৯২৮ পর্যন্ত প্রত্যেক মৌসুমে ৫৬ গড়ে রান করেছেন, ১৯২৭-২৮ মৌসুমে আবারো ১৩টি শতকের সাহায্যে করেছেন ৩,৩১১ রান। হেনড্রেন ১৯২৯-৩০ মৌসুমে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যান। ঐ সফরে ১১৫.৫০ ব্যাটিং গড়ে ৬৯৩ রান করেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে তার সর্বোচ্চ ২০৫ রানের ইনিংসটিও এসেছে ঐ সিরিজে।
সেই সিরিজে হেনড্রেন টানা ৬ ইনিংসে অর্ধশতক করে ইংল্যান্ডের নতুন রেকর্ড গড়েন তিনি, যা পরবর্তীতে স্পর্শ করেন টেড বেক্সটার, কেন ব্যারিংটন এবং অ্যালিস্টার কুক। আরেকটি ঘটনার জন্য ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন হেনড্রেন। ১৯৩৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজে হেলমেট বানিয়ে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে হেলমেট মাথায় মাঠে নামার কীর্তিটাও তার।
নিজের তৈরি হেলমেট মাথায় হেনড্রেন
প্যাটসি হেনড্রেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দুর্দান্ত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজন ছিলেন। জ্যাক হবসের ১৯৯টি শতকের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭০টি শতক হাঁকান তিনি। এছাড়া ৮৩৩টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ৫০.৮০ ব্যাটিং গড়ে ৫৭,৬১১ রান করেছেন। যা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে জ্যাক হবস এবং ফ্রাঙ্ক ওলির পর তৃতীয় সর্বোচ্চ।
হেনড্রেন ইংল্যান্ডের হয়ে ৫১ টেস্টে ৪৭.৬৩ ব্যাটিং গড়ে ৩,৫২৫ রান করেছেন ৭টি শতক এবং ২১ টি অর্ধশতকের সাহায্যে।
প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে এই পাঁচজন ছাড়াও আরো অনেক ক্রিকেটারই আছেন যাদের জীবনের সিংহভাগ সময় কেটেছে বাইশ গজে। কিন্তু এই ক’জন খেলোয়াড় প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন, কারণ তারা প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেটের সিংহভাগ বিশ্বরেকর্ডই রেখেছেন নিজেদের দখলে। জীবন তাদের কেটে গেছে বাইশ গজের ভেতরে। আজকের পৃথিবীতে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার ভিত নির্মাণ করেছিলেন এই অদম্য ক্রিকেটাররাই।